শিশির গুপ্ত
প্রথম থেকেই সন্দেহের তালিকায় ছিল। অবশেষে নয়াদিল্লিতে ইজরায়েলের দূতাবাসের সামনে আইইডির বিস্ফোরণের মাসখানেক পরে ভারতের সন্ত্রাসদমন সংস্থাগুলি নিশ্চিত যে সেই ঘটনার পুরো ছক কষেছিল ইরানের কুদস বাহিনী। আর বোমা রেখেছিল ভারতের একটি স্থানীয় শিয়া সংগঠন। বিষয়টির সঙ্গে অবহিত আধিকারিকরা একথাই জানিয়েছেন।
তাঁরা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের মূল চক্রান্তকারীদের আড়াল করতে আফগানিস্তানে বিস্ফোরণের আগে এবং পরে ইচ্ছা করে ভুয়ো ‘চিহ্ন’ রেখে দেওয়া হয়েছিল। তা থেকে ভারতীয় সংস্থাগুলি মনে করছে যে বিস্ফোরণের আগে খুঁটিনাটি তথ্য জোগাড় করা হয়েছিল।নাম গোপন রাখার শর্তে এক সন্ত্রাসদমন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘ভারতের মতো বন্ধুরাষ্ট্রকে না চটানোর জন্য সম্ভবত ইরানিরা কম অভিঘাতের বোমা রেখেছিল। কোনও মানুষের প্রাণহানির লক্ষ্য ছিল না।’
গত ২৯ জানুয়ারি বিকেলে দিল্লির এপিজে আবদুল কালাম রোডে ইজরায়েলের দূতাবাসের সামনে মুদৃ আইইডি বিস্ফোরণ হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় তিনটি গাড়ির কাঁচ। ঘটনায় কোনও হতাহতের খবর না মিললেও রাজধানীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়। বিশেষত যেখানে বিস্ফোরণ হয়েছে, সেখান থেকে মেরেকেটে দু'কিলোমিটার দূরে ‘বিটিং দ্য রিট্রিট’ (প্রজাতন্ত্র দিবসের সমাপ্তি অনুষ্ঠান) চলছিল। উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্তারা।
বিস্ফোরণস্থলের কাছে একটি চিঠিও উদ্ধার করা হয়েছিল। এক আধিকারিক জানান, ভারতে ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে উদ্দেশ করে লেখা সেই চিঠির হাতের লেখা এবং নির্দিষ্ট বানান থেকে আরও স্পষ্ট হয়, সেটি কোনও ইরানিয়ান লিখেছেন। তারপর সম্ভবত কূটনৈতিক সুরক্ষাকবচ থাকা কোনও এজেন্ট সেই চিঠির হস্তান্তর করেছিলেন। চিঠিতে কুদস বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা তথা ইরানিয়ান কম্যান্ডার কাশেম সোলেইমানি, আবু মেহধি আল মুহানদিস এবং ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহ মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। একইসঙ্গে চিঠিতে ‘শত্রু’ ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে জঙ্গি বলে অভিহিত করার পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদী দেশের দানব বলেও উল্লেখ করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ওই আধিকারিক।
বিষয়টি নিয়ে ভারতে ইরানের দূতাবাসের সঙ্গে ‘হিন্দুস্তান টাইমস’ যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে বিস্ফোরণের ঘটনায় এবার কড়া অবস্থান নিতে পারে নরেন্দ্র মোদী সরকার। কারণ আন্তর্জাতিক চাপের মুখেও তেহরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছিল নয়াদিল্লি। প্রত্যুত্তরে ভারতের মাটিতে তৃতীয় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘প্রক্সি’ যুদ্ধ শুরুর জন্য ইরানের বিরুদ্ধে কিছু না কিছু পদক্ষেপ করা হবে বলে নিশ্চিত সংশ্লিষ্ট মহল। তার আগে ইরানের সমর্থনকারী স্থানীয়দের নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর।