ফের বিবাদের কেন্দ্রবিন্দু ভাষা। হিন্দি ভারতের জাতীয় ভাষা নাকি সরকারি, এই নিয়ে এবার গোল বাধলো বিচারপতির বক্তব্যে। হিন্দি ভারতের জাতীয় ভাষা। শুনে চমকে গেলেও সম্প্রতি একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি চলাকালীন হিন্দি ভাষা সম্পর্কে এমন মন্তব্যই করেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। কিন্তু, প্রশ্ন হল বাস্তবে ভারতের জাতীয় ভাষা বা রাষ্ট্র ভাষা বলে কি কিছুর অস্তিত্ব আছে? দেশের সংবিধান কী বলছে জেনে নেওয়া যাক।
সম্প্রতি একটি মামলার শুনানি চলাকালীন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের পর্যবেক্ষণ ছিল, যদি কোনও সাক্ষী ভিন রাজ্যের বাসিন্দাও হয়, তাঁকে আদালতে দাঁড়িয়ে সওয়াল-জবাবের সময় হিন্দি ভাষাতে কথা বলতে হবে। প্রসঙ্গত, প্রমোদ সিনহা বনাম সুরেশ সিং চৌহান এবং অন্যান্য মামলায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত এই ধরনের পর্যবেক্ষণ জানায়। অহিন্দিভাষী রাজ্যের বাসিন্দা হলেও উত্তর প্রদেশের ট্রাইব্যুনালে সাক্ষীদের হাজির করা হলে তাদের হিন্দি ভাষাতেই জবানবন্দি দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত।
উত্তর প্রদেশের ফারুক্কাবাদে মোটর গাড়ি দুর্ঘটনার মামলা পশ্চিমবঙ্গের মোটর অ্যাক্সিডেন্ট ক্লেমস ট্রাইবুনাল দার্জিলিঙে স্থানান্তরিত করার আবেদন খারিজ করে দেন এই বিচারপতি। আবেদনকারী ব্যক্তি তথা গাড়ির মালিক আদালতে বলেন, এই মামলার সমস্ত সাক্ষী যেহেতু শিলিগুড়ির বাসিন্দা, তাই ফারুক্কাবাদের গাড়ি দুর্ঘটনা সংক্রান্ত মামলাটি উত্তরপ্রদেশে বিচার হলে ভাষাগত সমস্যা হতে পারে। ওই ব্যক্তির দাবি খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত।
এদিকে সংবিধান বলছে অন্য কথা। ভারতবর্ষের জাতীয় বা রাষ্ট্রীয় ভাষা বলে কোনও ভাষার উল্লেখ নেই সংবিধানে। সংবিধানের অষ্টম শিডিউল অনুসারে, দেশে ২২টি সরকারি ভাষা রয়েছে। এই ভাষাগুলি দেশের শিক্ষাগত, প্রশাসনিক বা অন্যান্য পরিষেবার ক্ষেত্রে সমগুরুত্বে ব্যবহার করার সাংবিধানিক ভাবে স্বীকৃত। এই তালিকায় রয়েছে বাংলা, কন্নড়, তামিল, তেলগু, মালয়ালম সহ ২২টি ভাষা।
১৯৬৩ সালের অফিশিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাক্ট অনুযায়ী, হিন্দি এবং ইংরেজি সরকারি ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয় এদেশে। হাইকোর্ট কিংবা সুপ্রিম কোর্টের ব্যবহারের জন্য ও অন্য কোনও অফিশিয়াল কাজের জন্য হিন্দি ও ইংরেজি ভাষাকে অফিশিয়াল ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত’র সাম্প্রতিক মন্তব্যে তাই স্বাভাবিক ভাবেই বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।