ভারতের রাজনীতিতে কমিউনিজমকে অনেকেই উদারপন্থী মনে করে থাকেন। তবে এক এক দেশের রাজনীতি একেক রকম। আর তার অন্যতম উদাহরণ পড়শি দেশ চিন। বিগত সাড়ে সাত দশক ধরে সেই দেশে কমিউনিস্ট সরকার আছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই তারা মোটেও উদারপন্থী নয়। সমকামিতা হোক কি ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, কোনও দিক দিয়েই চিনের কমিউনিস্ট সরকার 'আদর্শ' হতে পারে না উদারপন্থীদের কাছে। আর এরই মধ্যে সামনে এল চিনা প্রেসি়ডেন্ট শি জিনপিংয়ের একটি 'পরামর্শ'। চিনের তরুণ প্রজন্মের নারীদের উদ্দেশে সেই 'পরামর্শ' দিয়েছেন জিনপিং। তাঁর কথায়, মহিলাদের কাজ শুধুমাত্র নিজেদের উন্নয়ন করাই নয়, বরং পারিবারিক সুখ, সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রেখে জাতির উন্নয়ন করা। আর এর জন্যে কী করতে হবে? 'বিয়ে ও সন্তান জন্ম দিতে হবে'।
শি জিনপিংয়ের 'পরামর্শ', চিনের নারীদের বিয়ে ও সন্তান জন্ম দেওয়ার ওপর জোর দিতে হবে এবং এই নিয়ে নতুন করে একটি সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে। উল্লেখ্য, চিনা কমিউনিস্ট পার্টির অধীনে থাকা 'অল চায়না উমেনস ফে়ডারেশন'-এর সঙ্গে এই নিয়ে নাকি আলোচনা হয়েছে জিনপিংয়ের। সেখনেই তিনি বলেছেন, পরিবার নিয়ে নয়া ট্রেন্ড তৈরির ক্ষেত্রে মহিলাদের বড় ভূমিকা পালন করতে হবে দেশে।
প্রসঙ্গত, চিনে বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা তরুণদের তুলনায় অনেক বেশি। এর জেরে কর্মক্ষমতা সম্পন্ন নাগরিকের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে সেই দেশে। এদিকে সেদেশের জন্মের হার নিয়ে উদ্বিগ্ন জিনপিং সরকার। এই আবহে কমিউনিস্ট পার্টি তথা জিনপিংয়ের বক্তব্য, দেশকে 'এগিয়ে নিয়ে যেতে' গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে মহিলাদেরই। দেশে যাতে কর্মক্ষমতা সম্পন্ন তরুণ প্রজন্ম বেড়ে ওঠে, তার জন্যে নারীদের জন্ম দিতে হবে সন্তান। আর এককালে যে চিনে সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা ছিল, সেখানেই এখন মহিলাদের বিয়ে এবং সন্তান জন্ম দেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সন্তানকে বড় করার খরচ, কর্মজীবন ব্যাহত হওয়ার মতো কারণের জেরে চিনের মহিলা সাম্প্রতিককালে বিয়ে করতে চাইছেন না এবং মা হতে চাইছেন না। এই আবহে গত জানুয়ারি মাসে চিনের স্ট্যাটিস্টিকস ব্যুরোর তরফে জানানো হয়, বিগত ৬ দশকে এই প্রথমবার চিনের জনসংখ্যা সংকুচিত হয়েছে। জন্মের হার রেকর্ড ১০ শতাংশ নেমে গিয়েছে। ২০২২ সালে চিনে মাত্র ৯৫ লাখ সন্তানের জন্ম হয়েছে। ১৯৪৯ সালের পর থেকে তা সর্বনিম্ন। এই আবহে চিনের 'বৃদ্ধ জনসংখ্যা' দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ১৯৮০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত কার্যকর থাকা চিনের এক স্তান নীতিও এর জন্য দায়ী বলে মনে করেন অনেকে।