ঘরোয়া রাজনৈতিক স্বার্থে খলিস্তানিদের পক্ষ নিয়েছেন জাস্টিন ট্রুডো। আর সেই সুযোগেই কানাডায় খলিস্তানি আন্দোলনকে নয়া পর্যায়ে নিয়ে যেতে উদ্যোগী হল 'শিখস ফর জাস্টিস' নামক নিষিদ্ধ সংগঠন। উল্লেখ্য, ভারতে ইতিমধ্যেই নিষিদ্ধ গুরপতবন্তের 'সিখস ফর জাস্টিস'। সেই সংগঠনেরই প্রতিনিধি হিসেবে কানাডায় নিযুক্ত ছিল মৃত খলিস্তানি জঙ্গি হরদীপ সিং নিজ্জর। কানাডার শিখদের মধ্যে খলিস্তান ভাগের প্রস্তাবনা পাশ করানোর দায়িত্ব ছিল হরদীপের কাঁধে। এদিকে যে গুরুদ্বারে হরদীপকে খুন করা হয়েছিল, সেই গুরুদ্বারেই সম্প্রতি পাশ করানো হয় খলিস্তানপন্থী প্রস্তাবনা। সেই প্রস্তাবনা পাশ করানোর সময় কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ছিলেন ভারতেই। আর এবার শিখস ফর জাস্টিস নতুন করে গোটা কানাডা জুড়ে খলিস্তানের পক্ষে গণভোট করানোর তোড়জোড় শুরু করেছে।
এমনিতে আগামিকাল, ২৯ অক্টোবর কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়াতে খলিস্তনের পক্ষে একটি গণভোট করানোর কথা 'শিখস ফর জাস্টিস'-এর। এই ব্রিটিশ কলাম্বিয়াতেই থাকত মৃত খলিস্তানি জঙ্গি হরদীপ। এরপর আগামী বছর গোটা কানাডা জুড়ে খলিস্তানের পক্ষে গণভোট করানোর পরিকল্পনা করছে শিখস ফর জাস্টিস। ২০২৫ সালে কানাডার পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত এই গণভোট প্রক্রিয়া চলতে থাকবে বলে জানা গিয়েছে। এই আবহে কানাডার নির্বাচনের ওপর এই গণভোটের প্রভাব পড়তে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। এদিকে ট্রুডোর 'সমর্থন' পাওয়ায় খলিস্তানি গণভোটে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ যোগ দেবেন বলে আশা করছে শিখস ফর জাস্টিস। গুরপতবন্তের বক্তব্য, 'আগে অনেক খলিস্তানি সমর্থকই আগে নিজেদের মত প্রকাশ করতে আসতেন না। কারণ তারা ভয় পেতেন যে তাদের জঙ্গি আখ্যা দেওয়া হবে। তবে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর বক্তব্যের পর তারা মনে সাহাস পাবেন।'
উল্লেখ্য, গত জুন মাসে গুরুদ্বারের ভেতরেই গুলি করে হত্যা করা হয় খলিস্তানপন্থী জঙ্গি হরদীপ সিং নিজ্জরকে। হরদীপকে ২০ বারেরও বেশি গুলি করা হয়েছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী, কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের পঞ্জাবি অধ্যুষিত সারে অঞ্চলে থাকত হরদীপ। বিগত কয়েকবছরে কানাডার ভ্যানকুবারে ভারতীয় হাইকমিশনের সামনে খলিস্তানি বিক্ষোভের নেপথ্যে ছিল এই হরদীপ। জানা যায়, কানাডায় মৃত হরদীপের বিরুদ্ধে এনআইএ-র চারটি মামলা ছিল। এক হিন্দু পুরোহিতকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র সহ খলিস্তানি যোগের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। গতবছর জুলাইতেই হরদীপের মাথার দাম ১০ লক্ষ টাকা ধার্য করেছিল এনআইএ। জানা যায়, হরদীপ খলিস্তান টাইগার ফোর্সের প্রধান ছিল। গুরপতবন্ত সিং পান্নুনের 'শিখস ফর জাস্টিস' সংগঠনের মতাদর্শ প্রচারের দায়িত্ব ছিল হরদীপের টাইগার ফোর্সের ওপর।
জানা গিয়েছে, সারে-তে অবস্থিত গুরু নানক শিখ টেম্পল একপ্রকার দখল করে নিয়েছিল হরদীপ। সে গুরুদ্বারের সভাপতি ছিল। গত দুই বছর ধরে এই দায়িত্ব পালন করে আসছিল সে। কানাডার ভ্যানকুবারে ভারতীয় হাইকমিশনের সামনে খলিস্তানি বিক্ষোভের আয়োজন করত এই হরদীপ। এদিকে কানাডা ভিত্তিক খলিস্তানি নেতা মনিন্দর বয়েলেরও ঘনিষ্ঠ ছিল হরদীপ। এই মনিন্দর আবার শ্রী দমশমেশ দরবারের সভাপতি ছিল। মনিন্দর এবং হরদীপের গুরুদ্বারের বিরুদ্ধে বিচ্ছিনতাবাদী খলিস্তানি মনোভাব প্রচারের অভিযোগ রয়েছে। যদিও তা নিয়ে কানাডা সরকার কোনও পদক্ষেপই করেনি। আর উলটে নিজ্জরের মৃত্যুতে ভারত যোগের অভিযোগ তুলছে তারা।