দুঁদে রাজনীতিক, একাগ্র পাঠক, ইতিহাসপ্রেমী হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপরে অন্যতম বিশারদ হওয়া ছাড়াও খাদ্যরসিক হিসেবেও স্মরণীয় প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অবদান। বিশেষ করে মুর্শিদাবাদী আমের প্রচারে তিনিই ছিলেন অন্যতম প্রবক্তা।
চল্লিশের কোঠায় পৌঁছানোর আগে ভোজনবিলাসী হিসেবে দিল্লির রাজনৈতিক মহলে সুখ্যাতি ছিল প্রণববাবুর। বাংলা তো বটেই, দেশ-বিদেশের বিবিধ মুখরোচক পদ চেখে দেখায় তিনি ছিলেন বরাবর সংস্কারমুক্ত। কিন্তু চল্লিশ পেরিয়ে সেই প্রণব মুখোপাধ্যাই যখন প্রায় লুচির আকারের হাতরুটিতে নিজে সংযত করলেন, তখন অনেকেরই চোখ কপালে উঠেছিল।
রসনাপ্রেমী হলেও কোনও দিনই পেটুক বদনাম পেতে হয়নি প্রণববাবুকে। খাবারের বিষয়ে তিনি ছিলেন বেশ শৌখিন মেজাজের। সেই সঙ্গে প্রবল স্পর্শকাতর ছিলেন বাংলার মুর্শিদাবাদ জেলার আম সম্পর্কে।
ইউপিএ আমলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে একবার বিহারের মজফ্ফরপুরের আম ও লিচুর সুখ্যাতিতে পঞ্চমুখ হয়েছিলেন তদানীন্তন রেলমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব। অনেক ক্ষণ সেই স্তুতি শোনার পরে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে বঙ্গসন্তানের। লালুপ্রসাদকে থামিয়ে দিয়ে প্রণব ঘোষণা করেন, ‘ভুল বলছেন। ভারতের সেরা আম আর লিচু পাওয়া যায় আমার নির্বাচন কেন্দ্র মুর্শিদাবাদে।’
এতেই থেমে না থেকে সেই আম-লিচুর মাহাত্ম্য প্রচারে এরপর মন্ত্রিসভার সতীর্থ, জোটসঙ্গী নেতা এমনকি বিরোধী নেতাদেরও তিনি মুর্শিদাবাদ থেকে আনা আম ও লিচুর বিশেষ প্যাকেট উপহার দেওয়ার রীতি চালু করেন। শোনা যায়, রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরেও বেশ কিছুকাল এই অভ্যাস বজায় রেখেছিলেন প্রণববাবু।