ইতিমধ্যে শহরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে জর্জরিত কেন্দ্র। সেজন্য ভারতের ১৩ টি শহরেও আগামী সোমবার থেকে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করার পথে হাঁটতে চলেছে নয়াদিল্লি। তারইমধ্যে কেন্দ্রের চিন্তা বাড়িয়েছে ১৪৫ টি জেলা। যেগুলির অধিকাংশ গ্রামীণ এলাকায়। উপযুক্ত পদক্ষেপ না করলে ওই জেলাগুলি আগামীদিনে হটস্পট হয়ে ওঠার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
চতুর্থ দফার লকডাউনের পরে দেশের শহরগুলির রূপরেখা নিয়ে ইঙ্গিত মিলেছে বৃহস্পতিবারের দুটি বৈঠকে। একটি বৈঠকে পৌরহিত্য করেন কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবা। অন্যটির সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
আধিকারিকদের ইঙ্গিত, দেশের চার মহানগরী-সহ ১৩ টি শহরে সেই কঠোর বিধিনিষেধ জারি থাকতে পারে। সেগুলি হল - কলকাতা ও সংলগ্ন হাওড়া, মুম্বই, চেন্নাই, দিল্লি, আমদাবাদ, পুণে, থানে.হায়দরাবাদ, ইন্দোর, জয়পুর, যোধপুর, চেঙ্গলপাত্তু এবং তিরুভাল্লুর।
সংবাদসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, শহুরে এলাকায় করোনা মোকাবিলা নিয়ে ইতিমধ্যে নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্র। সেখানে মূলত ঝুঁকির মাত্রা, সংক্রমণের হার, মৃত্যু হার, আক্রান্তের সংখ্যআ দ্বিগুণ হওয়ার হার, প্রতি ১০ লাখ মানুষ পিছু নমুনা পরীক্ষার মতো বিষয়গুলির উপর জোর দেওয়া হয়েছে। আগের মতোই কনটেনমেন্ট জোনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নজরদারি, সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা, নমুনা পরীক্ষার প্রোটোকোলের মতো কৌশলের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করে ক্যাবিনেট সচিব জানিয়েছেন, দেশের সর্বাধিক করোনা কবলিত এলাকা থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরার কারণে আগামীদিনে পূর্ব ভারত করোনার বড়সড় হটস্পটে পরিণত হতে পারে। তাঁর বক্তব্য, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা-সহ ১২ টি রাজ্যে প্রাথমিকভাবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা তেমন বেশি ছিল না। কিন্তু গত ২৫ মে পর্যন্ত তিন সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা হুড়মুড়িয়ে বেড়েছে। মণিপুর ও ত্রিপুরার মতো রাজ্যেও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, আপাতত দেশে অধিকাংশ করোনা আক্রান্তের হদিশ মিলেছে মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, দিল্লি, গুজরাত, রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশ থেকে। গত ১৩ মে পর্যন্ত ভারতে আক্রান্তের ৭৫,০০০-র আশপাশে থাকলেও পরের ১৪ দিনে সংক্রমণের হার বেড়েছে। মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশার মতো রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সংক্রমণের হার বেড়েছে।
নাম গোপন রাখার শর্তে এক আধিকারিক বলেন, 'প্রাথমিকভাবে মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক, গুজরাতের মতো করোনা হটস্পট এলাকা থেকে ফেরার ফলে পূর্ব ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের ভিড় থাকায় রেল স্টেশন এবং বাস স্ট্যান্ডে সঠিকভাবে স্ক্রিনিং হচ্ছে না। ফলে অনেকেই এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে সংক্রমণ নিয়ে যাচ্ছেন।'
তাই বাড়তি সতর্কতা হিসেবে ১৪৫ টি জেলা বেছে নিয়েছে কেন্দ্র। তার মধ্যে অধিকাংশ আবার গ্রামীণ এলাকায়। যা কেন্দ্রের উদ্বেগ বহুগুণে বাড়িয়েছে। কারণ এতদিন শহরগুলিতেই বেশিরভাগ সংক্রমণ সীমাবদ্ধ ছিল। সে কথা মাথায় রেখে রাজ্য সরকারগুলিকে সেইসব জেলায় সংক্রমণ রোধে 'সক্রিয়ভাবে' কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে করোনার উৎসস্থলের সংখ্যা বেড়ে না যায়।
বৈঠকে যে প্রেজেন্টেশন দেওয়া হয়েছে, সেই অনুযায়ী, ওই জেলাগুলিতে ২,১৪৭ টি সক্রিয় কেস রয়েছে। যা দেশের ২.৫ শতাংশ। তার মধ্যে যে ২৬ টি জেলায় ২০-র বেশি সক্রিয় কেস রয়েছে, সেগুলির অধিকাংশ অসম, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ এবং উত্তরপ্রদেশে রয়েছে।