জল্পনা চলছিল বেশ কিছু বছর ধরেই। অবশেষে পরিকল্পনা মত কাজ শুরু করল নাসা। আমেরিকান স্পেস এজেন্সিটি আগামী ১০ বছরের মধ্যে চাঁদে খননের কাজ শুরু করার পরিকল্পনা নিয়েছে, এমনই প্রকাশিত হয়েছে দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে। ২০৩২ সালের মধ্যে সেখান থেকে মাটি খনন করার পরিকল্পনা রয়েছে নাসার। খবরটি এমন এক সময়ে এলো যখন সংস্থাটি ২০২৫ সালের মধ্যে চাঁদে মানুষ পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ১৯৭২ সালে অ্যাপোলো-১৭ -এ চড়ে মহাকাশচারীদের চাঁদে যাওয়ার পর প্রায় অর্ধ শতক চন্দ্রপৃষ্ঠে মানুষের পা পড়েনি। এবার প্রথম বারের জন্য এক নারী সদস্য পা রাখবেন চাঁদের মাটিতে। এই পর্যায়ে নাসা চাঁদের মাটি সংগ্রহ এবং চন্দ্র পৃষ্ঠে একটি প্রক্রিয়াকরণ প্লান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে।
নাসার জনসন স্পেস সেন্টারের একজন রকেট বিজ্ঞানী জেরাল্ড স্যান্ডার্স ব্রিসবেনে একটি সম্মেলনের সময় বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে তাঁরা বোঝার চেষ্টা করছে চাঁদের মাটিতে সম্পদের চরিত্র ও সম্ভাবনা নিয়ে। ঝুঁকির দিকগুলি নিয়েও তাঁরা নজর রাখছে গোটা প্রক্রিয়াকালে। ‘আমরা আক্ষরিক অর্থে চন্দ্র পৃষ্ঠে আঁচড় কাটছি মাত্র।’ মি: স্যান্ডার্স যোগ করেছেন।
রয়টার্সের মতে চাঁদে খনিজ জ্বালানির সন্ধান পাওয়া গেছে তার প্রথম গ্রাহক হবে বাণিজ্যিক রকেট কোম্পানিগুলি, যারা জ্বালানি বা অক্সিজেনের জন্য চাঁদের পৃষ্ঠ ব্যবহার করতে পারে। ২০১৫ সালে নাসার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বর্ণনা করা হয়েছিল, কেন নাসা চাঁদে খনন করার পরিকল্পনা করছে এবং কীভাবে ‘Lunar gold rush’ সংগ্রহের জন্য নামবে তাঁরা। ভূতাত্ত্বিক সমীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণ করে মহাকাশ সংস্থা দাবি করছে, চাঁদের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে হল জল, হিলিয়াম এবং বিরল খনিজ ধাতু, এগুলি স্ক্যান্ডিয়াম এবং ইট্রিয়াম বলেই অনুমান করা হচ্ছে।
নাসা বলছে জলকে রকেটের জ্বালানিতে রূপান্তরিত করা যেতে পারে ভবিষ্যতে, হিলিয়াম পারমাণবিক ক্ষেত্রের উন্নয়নে সাহায্য করতে পারে। চন্দ্রপৃষ্ঠে পাওয়া বিরল খনিজ ধাতু অর্থাৎ স্ক্যান্ডিয়াম এবং ইট্রিয়াম আধুনিক ইলেকট্রনিক্স সেক্টরকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই দুটি ধাতুই চাঁদের মাটিতে ব্যাপক পরিমানে আছে বলেই মনে করছেন মহকাশ বিজ্ঞানীরা। কিছুদিন আগেই নাসার বিজ্ঞানীরা একটা খোলামেলা জায়গায় চাঁদের কৃত্রিম পরিবেশ সৃষ্টি করে তার মাটি থেকে অক্সিজেন বের করেন, যা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের চাঁদের সম্পদ ব্যবহারের পথকে প্রশস্থ করতে পারে। তাঁদের দাবি, এই অক্সিজেন শুধুমাত্র শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজে লাগবে তাই নয়, পরিবহনের জ্বালানিও হিসাবেও ব্যবহার করা যাবে। এখন দেখার চাঁদের বুকে এত বিপুল সম্ভাবনার কতটা বাস্তবে কার্যকরি হয়। চাঁদের বুড়ির চড়কা কাটার গল্প থেকে চাঁদের মাটিতে খনিজ উত্তোলন, ইতিহাসের পথে মানুষের অগ্রগতিকে অবশ্যই কুর্ণিশ জানাতেই হয়।