গত জুলাইয়ে জয়পুর-মুম্বই এক্সপ্রেসে ডিউটির সময় ৩ যাত্রী এবং এক সিনিয়ার অফিসারকে গুলি করে খুন করেছিলেন আরপিএফ কনস্টেবল চেতন সিং চৌধুরী। সেই সংক্রান্ত মামলার চার্জশিট পেশ করেছে জিআরপি। তাতে দাবি করা হয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডের পর স্ত্রীকে ফোন করেছিলেন চেতন সিং। স্ত্রীকে তিনি ফোন করে বলেছিলেন, তিনি বড় ভুল করেছেন। তাই তার নিজেকে শেষ করে দেওয়া উচিত কিনা তা নিয়ে স্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন চেতন। তবে তার স্ত্রী তাকে আত্মসমর্পণ করতে বলেছিলেন।
আরও পড়ুন: ধর্মের ভিত্তিতে শত্রুতা! ট্রেনে গুলি করে খুন, অভিযুক্ত আরপিএফের বিরুদ্ধে এবার কড়া ধারা
গত ৩১ জুলাই জয়পুর-মুম্বই এক্সপ্রেসে ডিউটি করছিলেন ওই আরপিএফ কনস্টেবল। তখন আচমকা বি-৫ কোচে তিনি পরপর গুলি চালান তার একে-৪৭ রাইফেল থেকে। গুলিতে তিনজন যাত্রী মারা যান। তার এক সিনিয়র এএসআই টিকা রাম মিনার মৃত্যু হয় গুলিতে। পরে চেতন সিংকে আরপিএফ পোস্টে আটক করা হয়। তাকে স্থানীয় জিআরপির হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেই মামলায় তদন্ত শুরু করে জিআরপি। চেতন সিংয়ের স্ত্রীরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেই সময় তিনি পুলিশকে জানিয়েছিলেন, চেতনের মাথায় সমস্যা ছিল। তার জন্য ওষুধও চলছিল। গত ২০ অক্টোবর ম্যাজিস্ট্রেটের চার্জশিট পেশ করে জিআরপি। তাতে এই কথা উল্লেখ রয়েছে। চেতন সিংয়ের বিরুদ্ধে চার্জশিটে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২, ১৫৩ ধারা সহ, রেলওয়ে আইনের একাধিক ধারায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। চার্জশিট অনুযায়ী, চেতনের স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা চৌধুরী পুলিশকে দেওয়া বয়ানে জানিয়েছেন, গুলি চালানোর ঘটনার পর তার স্বামী ফোন করে হত্যার কথা জানান। চেতন ফোনে তাকে বলেছিলেন, ‘আমি ৩ জনকে গুলি করেছি এবং এসআইকেও গুলি করেছি। আমি একটি বড় ভুল করেছি।’ এরপর তিনি স্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ‘আমি কি নিজেকেও গুলি করব?’ তবে প্রিয়াঙ্কা তার স্বামীকে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বলেছিলেন।
প্রিয়াঙ্কা চৌধুরী পুলিশকে জানিয়েছেন, তার শ্বশুর আরপিএফ ছিলেন। ২০০৭ সালে কর্তব্যরত অবস্থায় তিনি মারা গিয়েছিলেন। চেতন বাবার চাকরি পেয়েছিলেন।এই বছরের এপ্রিলে তাকে মুম্বইয়ে বদলি করা হয়েছিল। প্রিয়াঙ্কা পুলিশকে আরও জানান, গত ফেব্রুয়ারিতে যখন পোরবন্দরে চেতন তার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন সেই সময় তিনি অস্বাভাবিক আচরণ করেছিলেন।চেতন হঠাৎ করে বকবক করা শুরু করত এবং আচমকা দেওয়ালে মাথা ঠুকতে শুরু করেছিল।
প্রিয়াঙ্কা পুলিশকে জানান, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি চেতনকে উত্তরপ্রদেশের মথুরার একজন নিউরোসার্জনের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। প্রাথমিক পরীক্ষা এবং এমআরআই করার পরে জানা যায়, চেতনের মস্তিষ্কে সামান্য রক্ত জমাট বেঁধেছিল। চিকিৎসক তাকে প্রথমে ১০ দিনের ওষুধ দেন। তাতে তার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। তাকে একই ওষুধ চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসক।
যদিও চেতন চৌধুরীর কাকা, পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, পোরবন্দর থেকে মুম্বইয়ে বদলি করার পরেই অসন্তুষ্ট ছিলেন চেতন। তিনি মথুরা বা আগ্রাতে পোস্টিং চেয়েছিলেন। তার আইনজীবী অমিত মিশ্র জানিয়েছেন, নথি খতিয়ে দেখার পরই তারা অভিযোগপত্রের বিষয়ে মন্তব্য করবেন।