চলতি ২০২০-২১ অর্থবর্ষে কোভিড অতিমারী পরিস্থিতিতে মনরেগা কর্মীদের পিছনে রেকর্ড পরিমাণ ব্যয় করা হয়েছে। তার জেরে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের হাতে আগামী ৪ মাসের জন্য রয়ে গিয়েছে বরাদ্দ অর্থের মাত্র ১০%। সম্প্রতি এই তথ্য উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় সরকারের বিবৃতিতে।
চলতি অর্থবর্ষে মনরেগা প্রকল্পে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক খাতে দুই কিস্তিতে মোট ৮৪,৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। মন্ত্রকের হিসাব অনুযায়ী, এর মধ্যে ৭৬,৮০০ কোটি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। গত ২০১৯ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত এই প্রকল্পে প্রায় ৫০,০০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছিল মন্ত্রক।
ঘটবনা হল, কেন্দ্রীয় বাজেটে বরাদ্দের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশিই এখনও পর্যন্ত খরচ করে ফেলেছে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। সমগ্র কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের মধ্যে সর্বোচ্চ খরচ করার রেকর্ডও এই মন্ত্রকেরই ঝুলিতে, জানিয়েছে কন্ট্রোলার জেনারেল অফ অ্যাকাউন্টস-এর ওয়েবসাইট। মন্ত্রকের খরচের খতিয়ান অনুসারে, অর্থ মন্ত্রকের এক আধিকারিকের মতে, মনরেগা প্রকল্পের জন্য তহবিল ঘাটতি কখনই হবে না এবং চাইলেই ফের অর্থের জোগান দেওয়া হবে।
মনরেগা প্রকল্প সম্পর্কে ওয়াকিবহাল সূত্র জানিয়েছে, তহবিলের এই বিপুল খরচের কারণ লকডাউন পরিস্থিতিতে কাজ হারানো ১০ লাখের বেশি পরিবারের জন্য এই প্রকল্পের অধীনে আয়ের ব্যবস্থা করা। জানা গিয়েছে, চলতি বছরে মোট ৯.২ কোটি সক্রিয় জব কার্ড তৈরি হয়েছিল। তার মধ্যে ৮৩.০৯% কাজ চেয়ে আবেদন করে।
কোভিড অতিমারীর জেরে মার্চের ২৪ তারিখ কেন্দ্রীয় সরকার দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করলে প্রায় ২ কোটি শ্রমিক কাজ হারিয়ে শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। তাঁদের বিকল্প আয়ের সংস্থান করতে মনরেগা প্রকল্পের অধীনে কাজ দেওয়ার নীতি গ্রহণ করে সরকার। গত মে মাসে ওড়িশা, বিহার ও ঝাড়খণ্ডের মতো নিম্নবিত্ত রাজ্যের শ্রমিকরা রোজগারের কারণে শহরে ফিরলে সেই চাপ কিছুটা কমে।
কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্ট অনুসারে, গত নভেম্বর মাস পর্যন্ত পরিবারপিছু কাজ পাওয়া গিয়েছে গড়ে ৪১.৫৯ দিন, যা ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ছিল ৪৮.৪ দিন এবং ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে ছিল ৫০.৮৮ দিন। গত বছর মনরেগা প্রকল্পের শর্ত মেনে ১০০ দিনের কাজ জুটেছে মাত্র ১৯ লাখ পরিবারের, যা গত বছর পেয়েছিল ৪৬ লাখ পরিবার।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, কাজের দাবি জানানো ৭.৫ কোটি পরিবারের মধ্যে ১৩% কর্মহীন থেকেছে। অর্থাৎ অতিমারী আবহে মনরেগা প্রকল্পে কর্মসংস্থানের আশ্বাস থাকা সত্ত্বেও সরকার তা পূর্ণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, উত্তর প্রদেশ ও ঝাড়খণ্ডের কথা, যেখানে মোট কাজ চাওয়া পরিবারের প্রায় এক-চতুর্থাংশ একদিনের জন্যও কাজ পায়নি।