অরুণাচল প্রদেশের বিতর্কিত অঞ্চলে একেবারে গ্রাম তৈরি করে ফেলেছে চিন। উপগ্রহ চিত্রে এই তথ্যটি সামনে আসার পর সতর্ক প্রতিক্রিয়া দিল ভারত। বিদেশমন্ত্রকের তরফ থেকে বলা হয়েছে জাতীয় সুরক্ষা সংক্রান্ত সমস্ত ঘটনার ওপর নজর রাখা হয় ও দেশের সার্বভৌমত্য বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
বিদেশমন্ত্রক জানায় যে ভারতও সীমান্তে রাস্তা ও ব্রিজ নির্মাণের কাজের গতি বাড়িয়ে দিয়েছে। মূলত সীমান্তবর্তী এলাকায় চিন যেরকম নির্মাণ করছে, তার প্রত্যুত্তরেই ভারত এই কাজ করছে বলে জানায় বিদেশমন্ত্রক। অরুণাচল প্রদেশে ভারতের সীমান্তের সাড়ে চার কিলোমিটারের ভিতর চিন একটি নতুন গ্রাম তৈরি করেছে। সেখানে আছে ১০১টি বাড়ি। মার্কিন সংস্থা প্ল্যানেট ল্যাবসের থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এই খবর জানায় এনডিটিভি।
এই গ্রামটি আপার সুবানসিড়ি জেলায় স্থিত সারি চু নদীর তীরে অবস্থিত। এটি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার লাগোয়া। এই অঞ্চল থেকেই পাঁচ ভারতীয়কে গত সেপ্টেম্বরে চিনা সেনা আটক করেছিল। বিগত ১৫ মাসে এই গ্রামটি নির্মাণ করা হয়েছে। কারণ ২০১৯ সালের অগস্ট মাসেও ওই স্থানে কোনও গ্রাম ছিল না। সেখানে এখন ছোটো মেজো অনেকগুলি বাড়ি ও সঙ্গে রাস্তা তৈরি হয়েছে।
তবে এই গ্রামের বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কিছু বলেনি বিদেশমন্ত্রক। তবে চিনের যাবতীয় নির্মাণ কাজের ওপর যে ভারত নজর রাখে, সেই আশ্বাস দেয় তারা। বিদেশমন্ত্রক বলে যে তারা দেখেছে মিডিয়া রিপোর্ট যে সীমান্তে নির্মাণকাজ করছে চিন। গত কিছু বছর ধরে চিন এরকম কাজ করছে ও প্রত্যুত্তরে ভারতও নির্মাণ কাজের গতি বৃদ্ধি করেছে যাতে স্থানীয়দের কাছে উন্নত পরিকাঠামো পৌঁছে দেওয়া যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, কিন্তু এই বিষয় সম্বন্ধে সম্যক ওয়াকিবহাল সূত্রের মতে গ্রামটি নিশ্চিত ভাবেই ওখানে আছে। তবে ওই অঞ্চল কার অধীনে, সেই বিষয়টি যে ওতটা স্পষ্ট নয়, সেই কথা বলেছেন তাঁরা। ওই অঞ্চলটি ১৯৫৯ থেকেই চিনের কব্জায় যখন অসম রাইফেলসের একটি ক্যাম্পের পতন হয় লাল ফৌজের সামনে।
পুরো অরুণাচল প্রদেশটিই নিজেদের বলে দাবি করে চিন। তারা সেটিকে দক্ষিণ তিব্বত বলে অভিহিত করে ও অনেক স্থানে ম্যাকমোহন লাইন চিন মানে না বলেই সূত্রের খবর। যেই সব অঞ্চল নিজেদের বলে চিন দাবি করে সেখানে নির্মাণকাজও করে তারা। একই ভাবে ভারতও অরুণাচলে নিজেদের পরিকাঠামো তৈরি করছে। কখনো কখনো স্থানীয় কম্যান্ডাররা বৈঠকও করে এই সংক্রান্ত সমস্যা মেটানোর জন্য।
বেলজিয়ামের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সিম ট্যাক জানিয়েছেন যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর নিজেদের দাবি মজবুত করার জন্য অনেক নির্মাণকাজ চালায় চিন। এই গ্রামটিও সেটির অংশ। ভারত যেটিকে নিয়ন্ত্রণ রেখা মনে করে, এই গ্রামটি সেই অঞ্চলের মধ্যেই পড়ে। ২০০০ সাল থেকেই ওখানে মিলিটারি আউটপোস্ট আছে চিনের। এবার লোকজন নিয়ে এসে জনবসতি তৈরি করছে তারা। এতদিন ধরে নিজেদের দিকে পরিকাঠামো তৈরি করার পর এবার লাদাখ, অরুণাচল ও ভুটানে সীমান্তের অপর দিকেও নির্মাণকাজ শুরু করেছে চিন। জমি কব্জা করার জন্য নিজেদের দাবি আরও সুদৃঢ় করার জন্যই এই কাজ করছে তারা বলে মনে করেন ট্যাক।