সঙ্গ ছেড়েছে জোটসঙ্গীরা। হাত ছেড়ে দিয়েছেন নিজেদের দলেরই কমপক্ষে ১২ জন ‘বিদ্রোহী’ সাংসদ। তার জেরে সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাল মাহিন্দ্রা রাজাপক্ষের সরকার। অর্থাৎ আপাতত যা পরিস্থিতি, তাতে এবার রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপক্ষকে ২২৫ আসন বিশিষ্ট শ্রীলঙ্কার সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য অন্য দলকে আহ্বান জানাতে হবে।
সাম্প্রতিক অশান্তির আগে সংসদে শ্রীলঙ্কা পদুজানা পেরামুনার ১১৭ জন সদস্য ছিলেন। জোটসঙ্গী শ্রীলঙ্কার ফ্রিডম পার্টির হাতে ছিলেন ১৫ জন সাংসদ। ১০ টি দলের জোটের হাতে ছিলেন ১৪ জন সদস্য। বিরোধী সামাগি জানা বালাওয়েগার (এসজেবি) হাতে ৫৪ জন সাংসদ, তামিল ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সের হাতে ১০ জন সাংসদ এবং বাকিদের হাতে ১৫ জন সদস্য ছিলেন। আপাতত শ্রীলঙ্কা পদুজানা পেরামুনার হাতে মাত্র ১০৫ জন সাংসদ আছেন। শাসক দল-সহ ‘বিদ্রোহী’ সাংসদের সংখ্যা পৌঁছে গিয়েছে ৪১-তে। এমনকী দায়িত্ব পাওয়ার একদিনের মধ্যেই ইস্তফা দিয়েছেন নয়া অর্থমন্ত্রী আলি সাব্রি।
শ্রীলঙ্কায় কী অবস্থা?
গত কয়েকদিন ধরে চরম দুর্দশার মধ্যে পড়েছেন শ্রীলঙ্কার মানুষ। আকাল দেখা দিয়েছে অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রীর। দিনের অধিকাংশ সময় থাকছে না বিদ্যুৎ। নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীয় দাম লাগামছাড়া হয়ে গিয়েছে। ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে এতটা ভয়ঙ্কর অবস্থার মুখে পড়তে হয়নি ২.২ কোটি জনসংখ্যা বিশিষ্ট দেশকে।
সেই পরিস্থিতিতে প্রবল বিক্ষোভ শুরু হয়। বৃহস্পতিবার রাতে পরিস্থিতি কার্যত রাজাপক্ষে সরকারের হাতের বাইরে চলে যায়। পদত্যাগের দাবিতে হাজার-হাজার মানুষ শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান। যা পরবর্তীতে হিংসাত্মক রূপ নেয়। দুটি সামরিক গাড়ি, পুলিশের জিপ, দুটি প্যাট্রোলিং মোটরসাইকে এবং একটি তিনচাকার গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। কমপক্ষে দু'জন বিক্ষোভকারী আহত হন। পুলিশ জানিয়েছিল, ৫৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, পাঁচজন সাংবাদিককে গ্রেফতার করে অত্যাচার চালিয়েছে পুলিশ এবং সেনা। যে অভিযোগ তদন্ত করে দেখবে বলে দাবি করে সরকার। তাতে অবশ্য বিক্ষোভে লাগাম পড়েনি। শুক্রবারও চলতে থাকে বিক্ষোভ।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শুক্রবার রাতের দিকে জরুরি অবস্থার ঘোষণা করেন শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি। জরুরি অবস্থার ঘোষণার পাশাপাশি শ্রীলঙ্কায় কড়া আইন কার্যকর করেছেন গোতাবায়া, যে আইনের আওতায় বিচার ছাড়াই যে কোনও ‘সন্দেহভাজন’ ব্যক্তিকে দীর্ঘদিন আটকে বা গ্রেফতার করে রাখার ছাড়পত্র দেওয়া হয় সেনাকে। সেইসঙ্গে কার্ফু দেশজুড়ে জারি করা হয়েছিল কার্ফু। বিক্ষোভ ঠেকাতে ৩৬ ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়া।