একটি বিরল মামলায় ধর্ষণে ২০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত এক ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। সাজাপ্রাপ্ত আসামী পরে নির্যাতিতাকে বিয়ে করেছিলেন। তাই তাদের বিয়ে বাঁচাতে প্রধান বিচারপতি ডক্টর ডিওয়াই চন্দ্রচূদের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চ তার সাজা মুকুব করে। শুধু তাই নয়, অপরাধীকে ২ লক্ষ টাকা জরিমানা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল নিম্ন আদালত। সেই নির্দেশও বাতিল করেছে সর্বোচ্চ আদালত। জানা গিয়েছে, অপরাধীর দায়ের করা কিউরেটিভ পিটিশনের ভিত্তিতে শীর্ষ আদালত এই নির্দেশ দিয়েছে।
আরও পড়ুন: সেটাই ধর্ষণ যখন প্রতারণা করে 'সম্মতি' নেওয়া হয়, সুপ্রিম পর্যবেক্ষণ
মামলার বয়ান অনুযায়ী, সম্পর্কে শঙ্কর নির্যাতিতার কাকা। জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তি তামিলনাড়ুর বাসিন্দা। নির্যাতিতার বয়স ১৪ বছর থাকার সময় শঙ্কর তাকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। তবে পরে তিনি নির্যাতিতাকে বিয়ে করেছিলেন এবং তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। মাদ্রাজ হাইকোর্টে এই মামলা উঠেছিল। সেক্ষেত্রে হাইকোর্ট শঙ্করের ২০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখেছিল। সুপ্রিম কোর্টও শঙ্করের আপিল এবং তার জেলের সাজা কমানোর জন্য আপিলের আবেদনের পর্যালোচনাও প্রত্যাখ্যান করেছিল। এরপর কিউরেটিভ পিটিশন দায়ের করেন শঙ্কর।
জানা যায় , ২০১৮ সালে শঙ্করকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল এবং ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল। শঙ্করের আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টে যুক্তি দিয়েছিলেন, তিনি নির্যাতিতাকে বিয়ে করেছেন এবং তাদের দুই সন্তান রয়েছে। তিনি জেলে থাকার বলে তার সংসারে অর্থাভাব দেখা দিচ্ছে। মামলার ‘অদ্ভুত তথ্য’ বিবেচনা করে সর্বোচ্চ আদালত শঙ্করের কারাদণ্ডের শাস্তি মুকুব করে।
সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের অধীনে বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে সুপ্রিম কোর্ট শঙ্করের সাজা বাতিল করেছে। উল্লেখ্য, সংবিধানের ১৪২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনও বিচারাধীন বিষয়ের ‘সম্পূর্ণ আইনি নিষ্পত্তি’র জন্য সুপ্রিম কোর্ট তার বিশেষ অধিকার প্রয়োগ করে নির্দেশনামা জারি করতে পারে কিংবা রায় দিতে পারে। ভারতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে বেঞ্চ বলেছে, ‘দুবার দোষী সাব্যস্ত হওয়া এবং সাজা বহাল থাকা সত্ত্বেও মামলার অদ্ভুত পরিস্থিতিতে এটি ১৪২ ধারার অধীনে তার ক্ষমতা প্রয়োগ করছে।’ এই ক্ষেত্রে আদৌ মেয়েটি ১৪ বছরের কিনা, সেটা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন ছিল। কারণ রেডিওলজিস্ট বলেছিলেন মেয়েটির বয়স ১৮-১৯ হবে। এমনকি তাঁর মা-ও একই বয়সের কথা বলেছিলেন। এছাড়াও অভিযুক্ত আগে বিবাহিত কিনা, সেই নিয়েও কিছুটা ধোঁয়াশা ছিল ও বহুবিবাহ সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হয়নি। সবমিলিয়ে শীর্ষ কোর্ট তাদের দেওয়া একই রকমের ঘটনায় পূর্ব রায়ের ওপর ভিত্তি করেই অভিযুক্তকে রেহাই দিয়েছে। আইনের কচকচানিতে না গিয়ে এখানে মানবিকতার দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই বিষয়টিকে দেখা হয়েছে বলেও শীর্ষ আদালত জানিয়েছে।