বুধবার সকালে দোলনার মতো দুলে উঠেছিল তাইওয়ান। গত ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল এদিনের ভূমিকম্প। এখনও পর্যন্ত অনেকেই জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। ভূমিকম্পের কারণে ৭০ জন খনি শ্রমিক দুটি পাথরের খনিতে আটকা পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলির জানালা দিয়ে লোকজনকে সরিয়েও নেওয়া হয়েছে। এই ভূমিকম্পে ১০০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এদিনের ভূমিকম্পের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল, যা ১৯৯৯ সালের ভয়াল ভয়ংকর ভূমিকম্পের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে অনুযায়ী, ভূমিকম্পের তীব্রতা মাপা হয়েছে ৭.৪। এর কেন্দ্র ছিল হুয়ালিয়েনের প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে। প্রশ্ন উঠছে যে ২.৩ কোটি জনসংখ্যার এই দেশটি কেন এতবার ভয়াবহ ভূমিকম্পের মুখে পড়ছে? কীভাবেই বা নিজেদের রক্ষা করছে দ্বীপরাষ্ট্রটি?
- কেন তাইওয়ান এত ভূমিকম্পের শিকার
তাইওয়ান প্রশান্ত মহাসাগরীয় 'রিং অফ ফায়ার'-এ অবস্থিত, পৃথিবীর টেকটোনিক প্লেটের কারণে ভূমিকম্পের ক্রিয়াকলাপের জন্য এটি একটি হটস্পট। তাইওয়ানের কাছে অবস্থিত ফিলিপাইন সাগর প্লেট এবং ইউরেশিয়ান প্লেটের সংঘর্ষের ফলে ঘন ঘন ভূমিকম্প হয়। এছাড়াও এর পার্বত্য জমি এই ভূমিকম্পের প্রভাবকে আরও প্রসারিত করে তোলে, যার দরুণ এখানকার ভূমিকম্প বাসিন্দাদের জীবনকে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে।
তাইওয়ান এবং এর আশেপাশের জলরাশি ১৯৮০ সাল থেকে ৪.০ বা তার বেশি মাত্রার প্রায় ২,০০০টি ভূমিকম্প নিবন্ধিত করেছে। ইউএসজিএস অনুসারে এর মধ্য ৫.৫ এর বেশি মাত্রার ১০০ টিরও বেশি ভূমিকম্প হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দ্বীপের সবচেয়ে খারাপ ভূমিকম্পটি ছিল ১৯৯৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর, যার মাত্রা ছিল ৭.৭। এই ঘটনায় ২,৪০০ জন মারা গিয়েছিলেন, প্রায় ১০০,০০০ জন গুরুতর আহত হয়েছিলেন। ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল হাজার হাজার বাড়ি-ঘর।
গত বুধবারও একই কাণ্ড ঘটেছিল। এই অঞ্চলের পাহাড়ি ভূমি কেঁপে উঠেছিল ব্যপক মাত্রায়। যার ফলে ভূমিধসও শুরু হয়েছিল। তাইওয়ানের পূর্ব উপকূলে পূর্ব হুয়ালিয়েন কাউন্টির কাছে যেখানে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল, সেখানেই বেশ কয়েকটি ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। যার দরুণ এখন টানেল এবং হাইওয়েগুলিও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে রয়েছে। অনেকেই এখানে ভূমিধসের সময় যানবাহন চাপা পড়ে মারাও গিয়েছেন।
- তাইওয়ান কীভাবে ভূমিকম্প সহ্য করার জন্য এত ভালোভাবে প্রস্তুত
তাইওয়ানের বিশ্বমানের ভূমিকম্পের প্রস্তুতি আজকের লাইমলাইটে। এখানকার মজবুত ঘরবাড়ি, একটি বিস্তৃত সিসমোলজিক্যাল নেটওয়ার্ক এবং ভূমিকম্প সুরক্ষার বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা এবং শিক্ষা প্রশংসার বিষয়। মিসৌরি ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ভূমিকম্পবিদ এবং অধ্যাপক স্টিফেন গাও এপিকে বলেছেন, তাইওয়ানের ভূমিকম্পের প্রস্তুতি এই বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত। আসলে ১৯৯৯ সালের ওই ভয়াবহ ভূমিকম্পের পরে দুর্যোগের প্রতিক্রিয়া বুঝে প্রস্তুতি করতেই হত তাইওয়ানকে। এর জন্য সমন্বয়, প্রশিক্ষণ, এবং দুর্যোগ প্রতিক্রিয়ার জন্য জাতীয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার উপর জোর দেওয়ার ফলে ভূমিকম্প এড়াতে ব্যাপক পদ্ধতির উদ্ভাবক আজ তাইওয়ান।