ইসলাম ধর্মাবলম্বী কোনও ব্যক্তি কি লিভ ইন সম্পর্কে থাকার অধিকার দাবি করতে পারেন? তাই নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ করল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। আদালত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, মুসলিম ধর্মাবলম্বী কোনও ব্যক্তি বিশেষ করে তিনি বিবাহিত হলে লিভ ইন সম্পর্কের অধিকার দাবি করতে পারেন না। কারণ সেটা মুসলিম আইনের বিরোধী। আদালত বলেছে, মুসলিমরা যে রীতিনীতি অনুসরণ করেন তা তাদের লিভ ইন সম্পর্কে যাওয়ার অধিকার দেয় না।
আরও পড়ুন: বিবাহ বিচ্ছেদ ছাড়া অবৈধ সম্পর্ককে লিভ ইন রিলেশনশিপ বলা যায় না: হাইকোর্ট
হাইকোর্টের বিচারপতি আতাউর রহমান মাসুদি এবং বিচারপতি অজয় কুমার শ্রীবাস্তবের বেঞ্চে জানিয়েছে, একজন ব্যক্তির বৈবাহিক বিষয়টি ‘পার্সোনাল ল’ এবং সাংবিধানিক অধিকার উভয়ের উপর ভিত্তি করেই ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে। তাই ধর্মীয় রীতিনীতিকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আদালত বলেছে, ‘সামাজিক ও ধর্মীয় রীতি নীতি এবং সংবিধান স্বীকৃত আইনগুলির উৎস একই। আমাদের সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে প্রথা এবং রীতিগুলি বৈধ আইন হিসেবে স্বীকৃত হলে এই ধরনের আইনগুলি উপযুক্ত ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।’ আরও ব্যাখ্যা দিয়ে আদালতের বক্তব্য, ‘সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের অধীনে অধিকার তখনই প্রযোজ্য হবে না যখন প্রথা এবং ঐতিহ্য দুই ব্যক্তির মধ্যে এই ধরনের সম্পর্ক নিষিদ্ধ করে।’
মামলার বয়ান অনুযায়ী, এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ উঠেছিল। সেই মামলা খারিজ করার আর্জি জানিয়ে তিনি হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদনের শুনানিতে এমন মন্তব্য করেছে হাইকোর্ট। মামলা সূত্রে জানা গিয়েছে, আবেদনকারী ব্যক্তি একজন মুসলিম। ইতিমধ্যেই তার এক স্ত্রী রয়েছে এবং ৫ বছরের কন্যা রয়েছে। ওই ব্যক্তি যে মহিলার সঙ্গে লিভ ইন সম্পর্কে থাকার বিষয়টি দাবি করছেন তিনি হলেন হিন্দু।
যদিও মামলাকারীর পক্ষে দাবি করা হয়েছিল, তার স্ত্রীর এই সম্পর্কে কোনও আপত্তি নেই। কারণ তিনি বেশ কিছু রোগে ভুগছেন। স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি। এরপরে আবেদনকারীর স্ত্রী এবং ওই হিন্দু মহিলাকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল বেঞ্চ। পরে আদালত জানতে পারে যে ওই মহিলা আদতে উত্তরপ্রদেশে নয় মুম্বইয়ে শশুরবাড়িতে থাকেন। আদালত মনে করছে, মূলত লিভ ইন সম্পর্ককে বৈধতা দেওয়ার জন্যই এই মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
এরপরেই নাবালক সন্তানের স্বার্থের দিকে তাকিয়ে আদালত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, এভাবে লিভ ইন সম্পর্ককে বৈধতা দেওয়া যাবে না। বিবাহের প্রতি সাংবিধানিক নৈতিকতা এবং সামাজিক নৈতিকতার ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন। আদালত নির্দেশ দিয়েছে, ওই ব্যক্তির লিভ ইন পার্টনারকে অবিলম্বে তার বাবা-মায়ের কাছে বাড়িতে নিয়ে যেতে হবে। এ সম্পর্কে একটি রিপোর্ট পুলিশকে জমা দিতে বলেছে আদালত।