১৯৯০ সাল। ভারতের রাজনীতির ইতিহাসে এক উত্তাল সময়। দলে দলে মানুষ করসেবায় বেরিয়ে পড়েছিলেন। করসেবকদের আটকাতে নানা পন্থা নেওয়া হয়েছিল। তবুও নাছোড়বান্দা ছিলেন তাঁরা। আর সেই ঢেউ আছড়ে পড়েছিল কলকাতাতেও। উত্তরপ্রদেশে করসেবায় গিয়ে পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছিলেন কলকাতার বড়বাজারের বাসিন্দা রাম ও শরদ কোঠারি।
এরপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। বাড়ির প্রিয়জন আর নেই। তবে সেই সময় পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়া সেই করসেবকদের পরিবার এবার হাজির অযোধ্য়ায়। এই দিনটার জন্যই তো তাঁরা অপেক্ষা করছিলেন। তিল তিল করে বুনে রাখা স্বপ্ন সফল হতে চলেছে এবার।
২২ জানুয়ারি অযোধ্য়ায় রামমন্দিরে উদ্বোধন হবে। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই রামমন্দিরের উদ্বোধন করবেন। আর সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসেছেন পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়া কলকাতার করসেবকদের সেই পরিবার। খবর আনন্দবাজারের প্রতিবেদন অনুসারে।
সেই সময় রামের বয়স ছিল ২২ বছর আর শরদের বয়স ছিল ২০ বছর। বাবার আপত্তি সত্ত্বেও সেই সময় করসেবায় অংশ নিতে এসেছিলেন তাঁরা। উত্তরপ্রদেশে। সেই সময় বড় বাজারের বাসিন্দা আরএসএসের কর্মী প্রদীপের নেতৃত্বেই তাঁরা কলকাতায় করসেবায় অংশ নিতে এসেছিলেন। ওই প্রতিবেদন অনুসারে জানা গিয়েছে, ১৯৯০ সালের ৩০ অক্টোবর বাবরি মসজিদে যারা উঠেছিলেন তাদের মধ্যে রাম-শরদও ছিলেন। সেদিনের সেই হাড়হিম করা অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন প্রদীপ।
ওই প্রতিবেদন অনুসারে জানা গিয়েছে, ২রা নভেম্বর করসেবার দিন মূলায়ম সিংহ সরকারের পুলিশ লাঠি কাঁদানে গ্যাস চালালে যে যার মতো করে সকলে আশ্রয় নেন। এদিকে একজনকে বাঁচাতে গিয়ে শরদের বুকে গুলি লাগে। পুলিশ আহত শরদকে টেনে নিয়ে যেতে চাইছিল। কিন্তু রুখে দাঁড়ান রাম। কিছুতেই নিয়ে যেতে দেব না। আসলে ভাইকে কোনওভাবেই কাছছাড়া করতে দিতে চাননি তিনি।
পুলিশ তাকে সরে যেতে বলে। কিন্তু সে সরেনি। এদিকে পুলিশ তাকে গুলি করার কথা বলেছিল। কিন্তু তবুও ভাইকে কাছছাড়া করতে দিতে চায়নি রাম। পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝড়া হয়ে গিয়েছিল শরীর। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন রাম-শরদ।
আর সেই রাম ও শরদের বোন পূর্ণিমা এসেছেন রামমন্দিরকে চাক্ষুস করতে। দাদারা বেঁচে থাকলে খুব খুশি হতেন আজকের দিনটার জন্য। রাম-শরদ কোঠারি স্মৃতি সংঘের তাঁবুতে থাকছেন বোন পূর্ণিমা। একদিকে দাদার স্মৃতিতে ভারাক্রান্ত বুক অন্যদিকে রামমন্দির উদ্বোধনের আগের উত্তেজনা। প্রহর গুনছে মৃত করসেবকদের পরিবার।