এতদিন ধিকিধিকি করে আগুন জ্বলছিল। রবিবার পুরোপুরি বিস্ফোরণ ঘটালেন ইস্টবেঙ্গলের কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত। ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (আইএসএল) রেফারিদের তুমুল সমালোচনা করলেন। রাহুলকুমার গুপ্তা এবং ক্রিস্টাল জনকে নিজের ‘দুঃস্বপ্নে’-এ দেখছেন বলে খোঁচা দিলেন স্প্যানিশ কোচ। সেখানেই তিনি থামেননি। নাম না করে ফুটবল স্পোর্টস ডেভলপমেন্ট লিমিটেডকেও (এফএসডিএল) তোপ দাগলেন ইস্টবেঙ্গলের কোচ। সেইসঙ্গে তিনি দাবি করেন, কোনও মরশুমে কোনও ফুটবলার বা কোনও কোচ ভালো পারফর্ম করতে না পারলে যেমন তাঁদের ছেঁটে ফেলা হয়, তেমনই রেফারি বিভাগের শীর্ষে থাকা ব্যক্তিকেও ছেঁটে ফেলা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ইস্টবেঙ্গলের কোচ।
আর রবিবার তিনি সেই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন একটা মামুলি প্রশ্নের প্রেক্ষিতে। সোমবার চেন্নাইয়িন এফসির বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে সাংবাদিক বৈঠকে ইস্টবেঙ্গলের পরিকল্পনা এবং চোটের জন্য কীভাবে লাল-হলুদ ট্যাকটিক্স পালটাতে হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তারপরই তিনি দাবি করেন, রেফারির ভুলে শেষ তিনটি ম্যাচে পাঁচ পয়েন্ট হাতছাড়া হয়েছে ইস্টবেঙ্গলের। পরিস্থিতি এমনই হয়েছে যে রাতে ঘুমানোর সময় তাঁর দুঃস্বপ্নে আসছেন রেফারিরা।
কুয়াদ্রাত বলেন, 'আমি যখন ঘুমাই, তখন আমি দুঃস্বপ্ন দেখি। আর সেই দুঃস্বপ্নের মধ্যে রাহুলকুমার গুপ্তা থাকেন। যিনি ক্রিস্টাল জনকে ব্যাখ্যা করছেন যে কেন নন্দকুমারের ক্ষেত্রে ফাউল দেননি এবং খেলা চালিয়ে গিয়েছেন। আর ক্রিস্টাল জন রাহুল কুমারের কাছে ব্যাখ্যা করছেন যে চিমার সময় রাকিপের বিরুদ্ধে কেন ফাউল দিয়েছেন। এটা ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন (নাটুকে অভিনয় করে)। হাস্যকর। লাগাতার (এটা হয়ে আসছে)। আমাদের এই ধারা পালটাতে হবে। আমি ইতিবাচক দিক থেকেই এটা বলছি।'
ভারতীয় ফুটবলের উত্থান হচ্ছে, পড়ছে রেফারিংয়ের মান, দাবি কুয়াদ্রাতের
কুয়াদ্রাত বলেন, ‘গত কয়েক বছরে বিভিন্ন দিক থেকে ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু রেফারিংয়ের দিক থেকে কোনও উন্নতি হয়নি। রেফারিং নিয়ে একটা বড় সমস্যা আছে। আমার মতে, এই মরশুমে রেফারিংয়ের মান ভালো হয়নি। একটা লাইন (সীমারেখা) থাকে। সেই লাইনটা আমরা পেরিয়ে গিয়েছি। রেফারির সেইসব সিদ্ধান্তের প্রভাব যখন ম্যাচের উপরে পড়ে, তখন সেইটা বড় সমস্যার হয়ে দাঁড়ায়।’
রেফারিদের ‘বস’-কেও ছাঁটাই করা হোক, দাবি কুয়াদ্রাতের
কুয়াদ্রাত বলেন, ‘কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। খেলার ভালোর জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। রেফারিদের রক্ষা করার জন্য সিদ্ধান্ত নিলে হবে না। যখন কোনও খেলোয়াড়ের কোনও মরশুম ভালো কাটে না, তখন তাকে লোনে ছেড়ে দেওয়া হয় বা বিক্রি করে দেওয়া হয়। যখন কোনও কোচ ভালো কাজ করতে পারেন না, তখন তাঁকে ছেঁটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় ক্লাব। এই মরশুমে চারজন কোচের সঙ্গে এরকম হয়েছে।’
আরও পড়ুন: ISL 2023-24: রেফারি নিরপেক্ষ নন- রাগ পড়ছে না, নর্থইস্ট ম্যাচের আগে ফের ক্ষোভ উগরালেন কুয়াদ্রাত
তিনি আরও বলেন, ‘এই লিগে মোট ১২টি দল আছে। তাছাড়া আরও একটি দল আছে - টিম রেফারি। তাঁরাও পেশাদার, তাঁরাও লিগে অংশগ্রহণ করছেন। আমার মতে, এই মরশুমটা তাঁদের অত্য়ন্ত বাজে কাটছে। অত্যন্ত খারাপ মরশুম কাটছে তাঁদের। (রেফারির টিমের) মাথায় একজন বস আছেন। আমি জানি, একজন বস আছেন। কিন্তু কেউ জানতে চাইছেন না যে সেই বস কেন এখনও কাজ করে যাচ্ছেন। যেভাবে খেলোয়াড় এবং কোচেদের ছেঁটে ফেলে হয়, তাঁকেও সেভাবে ছেঁটে ফেলা উচিত।’ সেই রেশ ধরে মোহনবাগানের জুয়ান ফেরান্দোর নামও টেনে আনেন। যিনি চাকরি খুইয়েছেন।
রেফারিং নিয়ে এফএসডিএলকে ৩ পরামর্শ কুয়াদ্রাতের
আইএসএলের রেফারিংয়ের মান উন্নত করার জন্য এফএসডিএলকে তিনটি পরামর্শ দেন কুয়াদ্রাত। তিনি দাবি করেন, মরশুমের শুরুতে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি। পরে কোচেরা কিছু বললেই কমিটির কাছে তাঁদের গ্যালারিতে বসতে হয়। তাই সেই বৈঠক অতি অবশ্যই করা উচিত। দ্বিতীয়ত, বিদেশি রেফারি আনতে হবে। তাঁদের উপর কোনও চাপ থাকে না। তৃতীয়ত, যত দ্রুত সম্ভব ভারতে ভিএরআর আনতে হবে। তবে লা লিগার মতো সমস্যা না হয়, সেটাও মাথায় রাখতে হবে।
রীতিমতো ক্ষোভের সুরে ইস্টবেঙ্গলের স্প্যানিশ কোচ বলেন, 'এভাবে আপনারা ভারতীয় ফুটবলকে সামলাতে চান? যাঁরা (মুখ খুলছেন), তাঁদের শাস্তি দেওয়া হবে। আমি আইএসএল চ্যাম্পিয়ন, আমি সুপার কাপ চ্যাম্পিয়ন। ভারতে আমি ইতিমধ্যে ছ'টি মরশুম কাটিয়ে ফেলেছি।'
কার্ডের ‘উৎসবে মেতেছিলেন রাহুল গুপ্তা’, তোপ কুয়াদ্রাতের
ইস্টবেঙ্গলের কোচ বলেন, ‘যেখানে সোজাসুজি লালকার্ড দেখিয়ে দেওয়া উচিত ছিল, সেখানে লালকার্ড না দেখাননি। কিন্তু মুম্বই-মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ম্যাচে উনি সাতজন খেলোয়াড়কে সাসপেন্ড করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আমরা খেলাটা ভালোবাসি। আমরা খেলোয়াড়দের মাঠে দেখতে চাই। কিন্তু উনি সাতজনকে মাঠের বাইরে বের করে দেন। উনি কার্ড দেখানোর উৎসবে নেমেছিলেন। সর্বাত্মকভাবে নিজেদের সংশোধন করতে হবে।’ সেইসঙ্গে তিনি দাবি করেন, খেলার ক্ষেত্রে রেফারিরা যদি নিজেদের মুখ্য করে তুলতে চান, তাহলে সেটা সমস্যার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
আইএসএল কর্তৃপক্ষ কী বলছে?
আর কুয়াদ্রাতের সেই বিস্ফোরণ নিয়ে এফএসডিএল কর্তৃপক্ষের তরফে সরকারিভাবে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তবে আইএসএলের সঙ্গে যুক্ত এক কর্তা বলেন, ‘শুধু মুখে বলে কী কিছু হবে। মাঠে গিয়ে খেলতে হবে। কোনও কোচ কি এটা বলেছেন যে রেফারির ভুলের কারণে জিতে গিয়েছেন? আমরা কখনও বলিনি যে রেফারি সবসময় ঠিক করবেন। খেলোয়াড় যেমন পেনাল্টি ফস্কে থাকেন, তেমনই রেফারিরও ভুল হয়।' সেইসঙ্গে তিনি বলেন, 'জিতলে কৃতিত্ব নেবেন কোচ। কিন্তু হারলে দোষ চাপাবেন রেফারির উপর।’
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।