জোহানেসবার্গের 'লজ্জা' আরও টাটকা করে তুলল ওভাল। ২০০৩ সালের ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে যে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতীয় পুরুষ ক্রিকেট দল এক ভয়ংকর বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল, তা যেন হুবহু মিলে গেল ২০২৩ সালের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে। ২০ বছরের ব্যবধাবে দুই দুঃস্বপ্নের ফাইনালে ভারতের স্কোরও সমান হল। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারত ২৩৪ রানে অল-আউট হয়েছিল (৩৯.২ ওভারেই)। আর ২০২৩ সালের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের দ্বিতীয় ইনিংসে সেই ২৩৪ রানেই অল-আউট হয়ে গিয়েছে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের বাহিনী। ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে দেখা যাবে যে প্রথম দল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনালের দুটি পৃথক সংস্করণে একই রান করল ভারত।
এবারের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ২০৯ রানে হেরে গিয়েছে ভারত। পঞ্চম দিনে এসে হারলেও আদতে প্রথম দিনেই ভারতের হাত থেকে ম্যাচটা বেরিয়ে গিয়েছিল। প্রাথমিকভাবে শুরুটা ভালো করলেও স্টিভ স্মিথ এবং ট্রেভিস হেডদের জুটিতে ম্যাচ থেকে কার্যত ছিটকে গিয়েছিল ভারত। যেখান থেকে আর ফিরতে পারেননি রোহিতরা। প্রথম ইনিংসে ৪৬৯ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া। জবাবে মাত্র ২৯৬ রানেই অল-আউট হয়ে যায় ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসে আট উইকেটে ২৭০ রান তুলে ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দেয় অস্ট্রেলিয়া। তারপর ৪৪৪ রানের বিশাল লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে নেমে মাত্র ২৩৪ রানেই গুটিয়ে যায় ভারতীয় ইনিংস।
যে ২৩৪ রান ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে যেন লজ্জার অধ্যায় হিসেবে থেকে যাবে। কারণ ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে ভারতীয় দল ২৩৪ রানেই অল-আউট হয়ে গিয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। ১২৫ রানের বড়সড় ব্যবধানে হেরে গিয়েছিল বিশ্বকাপের ফাইনালে। সেদিন জোহানেসবার্গে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে দুই উইকেটে ৩৫৯ রান তুলেছিল অস্ট্রেলিয়া। ১২১ বলে অপরাজিত ১৪০ রান করেছিলেন রিকি পন্টিং। জবাবে ৪০ ওভারও দাঁড়াতে পারেনি ভারত। লজ্জাজনক হারের মুখে পড়েছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন টিম ইন্ডিয়া।
তবে সেখানেই যে শুধু মিল আছে, এমন নয়। ২০০৩ সালে যে ট্যাকটিকাল ভুল করেছিলেন সৌরভরা, ২০২৩ সালে কার্যত সেটারই পুনরাবৃত্তি করেছেন রোহিতরা। ফাইনালের সকালে জোহানেসবার্গে সামান্য বৃষ্টি হওয়ায় প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলেন সৌরভ। সেই সিদ্ধান্ত কী ভয়ংকর ভুল ছিল, তা পরের ঘণ্টায় মালুম হয়েছিল। ওভালেও কার্যত একই ফাঁদে পড়েন রোহিত। পিচের উপরের অংশে ঘাসের আস্তরণ দেখে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে বাদ খেলতে নামে টিম ইন্ডিয়া। যত ম্যাচ গড়িয়েছে, তত প্রমাণিত হয়েছে যে সেই সিদ্ধান্ত কতটা ভুল ছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গত কয়েক বছরে স্মিথকে যথেষ্ট সমস্যা ফেলেছেন অশ্বিন। ওভালের প্রথমদিন যদি স্মিথ বা বাঁ-হাতি হেডকে দ্রুত আউট করে দিতে পারতেন অফস্পিনার অশ্বিন, তাহলে অস্ট্রেলিয়ার ভিতটাই নড়ে যেত। ওই একটা উইকেটই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারত। আর হয়ত আজ সকালে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ঘুম ভাঙত রোহিত, বিরাটদের।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।