২০১১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হন অভিনেত্রী লায়লা খান ও তাঁর পরিবারের পাঁচ সদস্য! প্রায় এক বছর পর, ২০১২ সালের জুলাই মাসে, ইগতপুরীতে অভিনেত্রীর ফার্ম হাউসের একটি গর্ত থেকে উদ্ধার হয় পচাগলা মৃতদেহ। খুনের অভিযোগ উঠে লায়লার সৎ বাবা পারভেজ তকের বিরুদ্ধে। তারপর কেটেছে ১২ বছর, অবশেষে অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করল দায়রা আদালত।
নিখোঁজ হওয়ার আগে লায়লা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের শেষবার দেখা গিয়েছিল অভিনেত্রীর মা সেলিনার তৃতীয় স্বামী তাকের সঙ্গে৷ পুলিশের সন্দেহ, ওশিওয়ারায় একটি ফ্ল্যাট ও দোকান, মীরা রোডের আরেকটি ফ্ল্যাট এবং ইগতপুরীর ফার্মহাউস-সহ গয়না হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যেই তক খুন করে লায়লাকে। সেলিনার দ্বিতীয় স্বামী আসিফ শেখের অভিযোগ, তাক লায়লা ও তার বোনদের পতিতাবৃত্তিতে ঠেলে দিতে চেয়েছিল।
তদন্ত চলাকালীন জম্মু ও কাশ্মীরের বন ঠিকাদার তাক। পুলিশি তদন্তে তিনি শিকার করেছিলেন, নিরাপত্তাহীনতার কারণে সৎ মেয়ে লায়লা, স্ত্রী সেলিনা বড়-সহ সেলিনার অপর তিন সন্তান আজমিনা, যমজ ভাইবোন জারা ও ইমরানকে খুন করনে তিনি। ওই সময় পরিবারের সঙ্গে থাকায় প্রাণ যায়, লায়লার খুড়তুতো বোন রেশমারও।
পুলিশ জানিয়েছে, ২০১০ সালে আজমিনা, রেশমা ও জারা দুবাই গিয়েছিল এবং সেলিনার তৃতীয় স্বামী তাকের পরিচিত এক আরব নাগরিকের সঙ্গে কাজ করত। তাক এবং পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে যখন তারা ভারতে ফিরে আসার পরে তাঁদের উপার্জন তাকের সঙ্গে ভাগ করে নিয়ে অস্বীকার করে।
দায়রা আদালতে জমা দেওয়া চার্জশিটে, ক্রাইম ব্রাঞ্চ উল্লেখ করেছে যে দুবাই ভ্রমণ থেকে প্রাপ্ত অর্থ ভাগ করতে অস্বীকার করায় তাক ক্ষুব্ধ হয়েছিল এবং সেই থেকেই ছক কষে সৎ ছেলেমেয়ে এবং স্ত্রীকে ইগাতপুরী ফার্মহাউসে হত্যা এবং তাঁদের সম্পত্তি দখলের ষড়যন্ত্র করেছিল।
পুলিশের ডায়রির এক ওয়ান্টেড অভিযুক্ত শাকির হুসেন ওয়ানিকে নিজের পরিকল্পনা মাফিক ফার্মহাউসে প্রহরী হিসাবে নিয়োগ করেন লায়লার সৎ বাবা। পরিবার নিয়ে খামারবাড়িতে পৌঁছানোর পরে, সেলিনার সাথে তাকের তর্ক হয়েছিল, যার পরে তিনি তাকে একটি ভোঁতা বস্তু দিয়ে আঘাত করেছিলেন যার ফলে তার মৃত্যু হয়েছিল। পরিবারের অন্য সদস্যরা সাহায্যের জন্য ছুটে এলে চৌকিদারের সাহায্যে ইমরানকে বেধড়ক মারধর করে তাক। এরপর ছুরি ও রড দিয়ে পরিবারের বাকি পাঁচ সদস্যকে হত্যা করে, সমস্ত দেহ ফার্ম হাউসেই পুঁতে দেয় এবং প্রমাণ লোপাট করার জন্য বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়!
ক্রাইম ব্রাঞ্চ পরবর্তীকালে ফার্মহাউস থেকে ছয়টি মৃতদেহের কঙ্কাল উদ্ধার করে। লায়লা মীরা রোডের ফ্ল্যাটের পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি দিয়ে রেখেছিলেন মায়ের দ্বিতীয় স্বামী আসিফ শেখকে। অপর সৎ বাবার সঙ্গে লালয়ার সুসম্পর্ক সহ্য হয়নি তাকের। ঘটনার ১৩ বছর পর এবং ৪০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বৃহস্পতিবার দায়রা আদালত তাককে দোষী সাব্যস্ত করে। ১৪ ই মে এই মামলায় সাজা ঘোষণা করবে আদালত, ক্রাইম ব্রাঞ্চের তরফে সর্বোচ্চ সাজার আবেদন জানানো হয়েছে।