পাকিস্তান ক্রিকেটে যেন ধুম পড়ে গিয়েছে মুড়িমুড়কির মতো দ্বিশতরান করার। প্রথম টেস্টে সাউদ শাকিল দ্বিশতরান করেছিলেন। আর দ্বিতীয় টেস্টে ওপেনার আবদুল্লাহ শফিক দুরন্ত ছন্দে করে ফেলেন ডাবল সেঞ্চুরি। সেই সঙ্গে তৃতীয় দিনের শেষে পাকিস্তানের স্কোর সাড়ে পাঁচশো ছাড়িয়ে গিয়েছে।
দ্বিতীয় টেস্টের প্রথমে ব্যাট করতে নামলে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিংয়ে একেবারে ধস নামে। মাত্র ১৬৬ রানে গুটিয়ে যায় তারা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান রানের পাহাড় গড়ে ফেলেছে। দ্বিতীয় দিন বৃষ্টির কারণে মাত্র ১০ ওভার খেলা হয়েছিল। তাতেই ১২ রানের লিড পেয়েছিল পাকিস্তান। তবে তৃতীয় দিন পাক ব্যাটাররা দাপটের সঙ্গে খেলে পাকিস্তানের লিড একেবারে আকাশছোঁয়া করে ফেলে। আর তাতে চাপে পড়ে গিয়েছে শ্রীলঙ্কা। বৃষ্টিতে ভেস্তে না গেলে, বা বড় কোনও অঘটন না ঘটলে, দ্বিতীয় টেস্টেও শ্রীলঙ্কাকে ল্যাজেগবোরে করে হারানোর বড় সম্ভাবনা রয়েছে পাকিস্তানের।
যে পিচে শ্রীলঙ্কার ব্যাটাররা রান তুলতে নাজেহাল হয়েছে, সেই পিচেই রানের ফোয়ারা ছুটিয়েছেন পাক ব্যাটাররা। এদিন শফিকের দ্বিশতরান এবং আগা সলমনের সেঞ্চুরির হাত ধরে পাকিস্তান তৃতীয় দিনের শেষে ৫ উইকেটে ৫৬৩ রান করে ফেলেছে। তাদের লিড এখন ৩৯৭ রানের। হাফসেঞ্চুরি করেছেন সাউদ শাকিল। সেই সঙ্গে টেস্ট ইতিহাসে নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন তিনি। ক্যারিয়ারের প্রথম সাতটি টেস্টেই ফিফটি করা প্রথম ব্যাটসম্যান হয়েছেন শাকিল। ছাপিয়ে গিয়েছেন প্রথম ছয় টেস্টে হাফসেঞ্চুরি করা ভারতের সুনীল গাভাসকর, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাসিল বুচার, পাকিস্তানের সইদ আহমেদ এবং নিউজিল্যান্ডের বার্ট সাটক্লিফের যৌথ রেকর্ড।
তৃতীয় দিন বাবর আজমকে সঙ্গী করে ব্যাট করতে নেমেছিলেন শফিক। কিন্তু বাবরকে দিনের শুরুতেই সাজঘরে পাঠান প্রভাত জয়সূর্য। চারটি চার এবং ১টি ছক্কার হাত ধরে ৭৫ বলে ৩৯ করে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন পাক অধিনায়ক। পাঁচে ব্যাট করতে নেমে শাকিল সঙ্গত করতে থাকেন শফিককে। চতুর্থ উইকেটে ১০৯ রানের পার্টনারশিপ করে ফেলেন তাঁরা। তবে হাফসেঞ্চুরি করে আসিথা ফার্নান্দোর বলে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন শাকিল। তিনি ১১০ বলে ৫৭ রান করেন। তাঁর ইনিংসে রয়েছে ৬টি চার।
এর পর সরফরাজ আহমেদ নামলে, তিনি চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন। রিটায়ার্ট হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়ার আগে ৩টি চারের সাহায্যে ২২ বলে ১৪ রান করেছিলেন। তবে আগা সলমনকে নিয়ে ফের জুটিতে সেঞ্চুরি করেন শফিক। এই জুটি মিলে ১২৪ রানের পার্টনারশিপ করে। এর মাঝেই নিজের দ্বিশতরান পূরণ করেন শফিক। ১৯০ রান নিয়ে চা বিরতিতে গিয়েছিলেন তিনি। ফিরে এসে সাবধানী ব্যাটে পৌঁছে যান ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিতে। ১৪তম টেস্টে এসে এই স্বাদ পেলেন ডানহাতি ব্যাটার আবদুল্লাহ শফিক। আগের ১৩ টেস্টে ৩টি সেঞ্চুরি ও ৪টি হাফসেঞ্চুরি ছিল তাঁর নামের পাশে। অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেও শতরান রয়েছে তাঁর। এদিনের আগে আবদুল্লাহ শফিকের সর্বাধিক রান ছিল ১৬০। ৩২২ বল খেলে দ্বিশতরান পূরণ করেন শফিক।
আরও পড়ুন: হরমনের লজ্জাজনক আচরণের খেসারত- এশিয়াডের প্রথম দুই ম্যাচ মিস করবেন ভারত অধিনায়ক
বুধবার সকালেই খেলা শুরু হওয়ার পর ১৪৯ বলে সেঞ্চুরি করে ফেলেছিলেন শফিক। তার পরে পৌঁছে যান দ্বিশতরানে। পাক তারকার এই ২০১ রানের ইনিংস সাজানো ১৯টি চার এবং চারটি ছয় দিয়ে। জয়সূর্যের বলে ক্যাচ তুলে সাজঘরে ফেরার আগে পাকিস্তানের ইনিংসকে একেবারে শক্তপোক্ত করে দিয়ে যান শফিক। পাকিস্তানের হয়ে দ্বিশতরান করার তালিকায় আবদুল্লাহ ২৪তম। তিনি সেই দেশের সপ্তম ওপেনার, যিনি দ্বিশতরান করলেন। পাকিস্তানের হয়ে সব থেকে বেশি দ্বিশতরান রয়েছে ইউনিস খান এবং জাভেদ মিয়াঁদাদের। ছ’টি করে দ্বিশতরান রয়েছে তাঁদের।
শফিক আউট হওয়ার পর পাকিস্তানের রানের গতি থামেনি। আগা সলমন পাক স্কোরবোর্ডে সমানে রান যোগ করতে থাকেন। আগের ম্যাচে ১৭ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেছিলেন সলমন। এই ম্যাচে আর কোনও ভুল নয়। ১২৩ বলে চার হাঁকিয়ে নিজের সেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি। এটি তাঁর দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি। শতরান করতে তিনি দশটি চার এবং একটি ছক্কা হাঁকিয়েছেন। ষষ্ঠ উইকেটে তাঁকে সঙ্গত করেছেন মহম্মদ রিজওয়ান। সলমন ১৩২ রান (১৪৮ বলে) করে এখনও ক্রিজে রয়েছেন। রিজওয়ান করেছেন অপরাজিত ৩৭ রান (৬১ বলে)। ৩৯৭ রানে এগিয়ে থাকার পরেও এখনও ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণা করেনি পাকিস্তান। সম্ভবত এক ইনিংসে জেতার লক্ষ্য পাকিস্তানের। তাই আর যাতে ব্যাট করতে নামতে না হয়, তাই বড় রানের বোঝা শ্রীলঙ্কার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে, তাদের দ্রুত অলআউট করার পরিকল্পনা রয়েছে বাবর আজমদের। শ্রীলঙ্কার হয়ে অসিথা ফার্নান্দো ৩টি এবং জয়সূর্য ২উইকেট নিয়েছেন।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।