পুরাণ অনুযায়ী জ্যৈষ্ঠ শুক্ল দশমীতে, হস্ত নক্ষত্রে গঙ্গা শিবের জটা থেকে বেরিয়ে মর্ত্যে এসেছিলেন। মনে করা হয় এদিন গঙ্গা স্নান করলে অজ্ঞানতাবশত হয়ে যাওয়া পাপ ও কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এই পবিত্র নদীতে স্নান করলে ১০ ধরণের পাপ নষ্ট হয়। করোনাকালে গঙ্গা স্নান সম্ভব হয়। তাই বাড়ির জলে গঙ্গাজল মিশিয়ে স্নান করতে পারেন। এদিন বিষ্ণুপদী, পুণ্যসলিলা গঙ্গা পৃথিবীতে অবতরিত হন।
স্কন্দপুরাণ অনুযায়ী গঙ্গা দশমীর দিনে পবিত্র নদীতে গিয়ে স্নান, ধ্যান ও দান করা উচিত। এর ফলে সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। তবে পবিত্র নদীতে যেতে না-পারলে গঙ্গার ধ্যান করে স্নান করুন। এ ছাড়া গঙ্গাজল স্পর্শ ও গ্রহণ করলেও পুণ্য লাভ করা যায়।
বিষ্ণু পুরাণ মতে, গঙ্গার নাম নিলে, শুনলে, তাঁকে দেখলে, গঙ্গা জল পান করলে, স্নান করলে, গঙ্গা নাম উচ্চারণ মাত্রে তিন জন্মের পাপ নষ্ট হয়। মৎস্য, গরুড় ও পদ্ম পুরাণ অনুযায়ী হরিদ্বার, প্রয়াগ ও গঙ্গার সমুদ্র সঙ্গমে স্নান করলে ব্যক্তি মৃত্যুর পরও স্বর্গে পৌঁছন। তার পর তাঁর আর জন্ম হয় না, সে নির্বাণ লাভ করে।
১০টি পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়
শাস্ত্র মতে গঙ্গা অবতরণের এই পবিত্র দিনে গঙ্গায় স্নান ও পুজো-উপবাস করলে ব্যক্তি ১০ ধরণের পাপ থেকে মুক্তি পায়। না দেওয়া বস্তু নেওয়া, নিষিদ্ধ হিংসা, পরস্ত্রী সঙ্গম—এগুলি দৈহিক পাপ হিসেবে বিবেচ্য। মুখ থেকে কটূ বচন বলা, মিথ্যে কথা বলা, কারও কান ভাঙানো, বাণী দ্বারা মনকে কষ্ট দেওয়া— এটি বাণীর কারণে হওয়া চার প্রকারের পাপ। আবার অন্যের ধন নেওয়ার বিচার করা, কারও জন্য খারাপ ভাবনা ও অসত্য বস্তুর প্রতি আগ্রহ রাখা—এগুলিকে মানসিক পাপ বলা হয়। অর্থাৎ, গঙ্গা দশমীর দিনে গঙ্গা স্নান করলে দৈহিক, বাণী দ্বারা এবং মানসিক পাপ থেকে ব্যক্তি মুক্তি পায়। গঙ্গা স্নানের সময় স্বয়ং নারায়ণ দ্বারা উক্ত মন্ত্র- ‘ওম নমো গঙ্গায়ৈ বিশ্বরূপিণ্যে নারায়ণ্যৈ নমো নমঃ’-র জপ করলে পুণ্য লাভ করা যায়।
১০-১০ সামগ্রীর গুরুত্ব
স্কন্দ পুরাণ অনুযায়ী গঙ্গা দশমীর দিনে ১০-১০ সুগন্ধিত পুষ্প, ফুল, নৈবেদ্য, দশ দীপ ও দশাঙ্গ ধূপের দ্বারা শ্রদ্ধা ভরে যথাযথ নিয়ম নীতি পালন করে ১০ বার গঙ্গা পুজো করা উচিত। এদিন যে বস্তু দান করবেন, তার সংখ্যাও ১০ হওয়া উচিত। আবার যে বস্তু দিয়ে পুজো করবেন, তার সংখ্যাও ১০ হওয়া উচিত। এমন করলে শুভ ফলে বৃদ্ধি হয়। গঙ্গা প্রসন্ন হয়ে ব্যক্তিকে পাপ মুক্ত করেন। এমনকি দক্ষিণাও ১০ জন ব্রাহ্মণকে দেওয়া উচিত। এদিন গঙ্গায় স্নান করার সময় ১০ বার ডুব দিতে হয়।