পিত্রোঁ বৈ দেবঃ। পিত্রোঁ বৈ জনার্দন। পিত্রোঁ বৈ বেদ। পিত্রোঁ বৈ ব্রহ্মঃ। অর্থাৎ পিতৃরাই দেবতা, জনার্দন, বেদ ও ব্রহ্ম।
শ্রাদ্ধাত পরতরং নান্যচ্ছেয়স্কর মুদাহৃতম।
তস্মাৎ সর্ব প্রযত্নেন শ্রাদ্ধং কুর্যাত বিচক্ষণঃ।।
অর্থাৎ, সংসারে দৈহিক, দৈবিক ও ভৌতিক— এই তিন তাপ থেকে মুক্তির জন্য শ্রাদ্ধ ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই। তাই যত্ন সহকারে শ্রাদ্ধ করা উচিত। পূর্বপুরুষদের জন্য উৎসর্গীকৃত পিতৃপক্ষের মাস ভাদ্রপদ পূর্ণিমা থেকে আশ্বিন অমাবস্যা পর্যন্ত পালিত হয়। সূর্যপুত্র যম ২০ হাজার বছর পর্যন্ত ঘোর তপস্যা করে শিবকে প্রসন্ন করেন। বর স্বরূপ শিব যমকে পিতৃলোকের অধিকারী বানান। শাস্ত্র মতে, যে ব্যক্তি সারা বছর পুজো-পাঠ করেন না, তাঁরা যদি নিজের পূর্বপুরুষদের শ্রাদ্ধ করেন, তা হলে ইষ্ট কার্যসিদ্ধি ও পুণ্য অর্জন করতে পারেন।
শ্রাদ্ধের তিথি:
শাস্ত্র মতে, সারা বছরে শ্রাদ্ধের ৯৬টি সুযোগ রয়েছে। এগুলি হল ১২ মাসে ১২টি অমাবস্যা, সত্যযুগ, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলিযুগের শুরুর চারটি তিথি, মনুবোর শুরুর ১৪টি মন্বাদি তিথি, ১২টি সংক্রান্তি, ১২টি বৈধৃতি যোগ, ১২টি ব্যতিপাত যোগ, ১৫টি মহালয়া ও শ্রাদ্ধপক্ষের তিথি। ৫টি অষ্টকা, ৫টি অন্বষ্টকা ও ৫টি পূর্বেধ্ধুহ।
কোন তিথিতে কার শ্রাদ্ধ করা উচিত:
যে কোনও মাসের যে তিথিতে পরিজনের মৃত্যু হয়েছে, পিতৃপক্ষে তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত তিথিতেই শ্রাদ্ধ করা উচিত। এ ছাড়া কিছু বিশেষ তিথিও রয়েছে, যখন যে কোনও ভাবেই মৃত পরিজনদের শ্রাদ্ধ করা যেতে পারে। স্বামী জীবিত থাকাকালীন স্ত্রীর মৃত্যু হলে নবমী তিথিতে তাঁদের শ্রাদ্ধ করা হয়। আবার এমন স্ত্রী, যাঁর মৃত্যুর তিথি জানা নেই, তাঁদের শ্রাদ্ধও মাতৃ নবমীতে করার বিধান রয়েছে। সমস্ত বৈষ্ণব সন্ন্যাসীর শ্রাদ্ধ একাদশীতে করা হয়। আবার অস্ত্রাঘাত, আত্মহত্যা, বিষ ও দুর্ঘটনা ইত্যাদির ফলে মৃত্যু হলে চতুর্দশীর দিনে শ্রাদ্ধ করা হয়।
সর্পদংশ, ব্রাহ্মণ অভিশাপ, আগুনে পুড়ে, দন্তপ্রহার, হিংস্র পশুর আক্রমণ, গলায় ফাঁস লাগিয়ে, কোনও মহামারী বা অতিমারী, ক্ষয় রোগ, কলেরা, ডাকাতের আক্রমণ ইত্যাদির ফলে মৃত্যু হলে এমন ব্যক্তির শ্রাদ্ধ পিতৃপক্ষের চতুর্দশী ও অমাবস্যার দিনে করা উচিত। যাঁদের মৃত্যুর পর সংস্কার করা হয়নি, তাঁদের শ্রাদ্ধও অমাবস্যায়ে করা উচিত।
তিল ও কুশ দিয়ে করা উচিত শ্রাদ্ধ-তর্পণ:
পিতৃলোকের অধীশ্বর জনার্দনের শরীরের ঘাম থেকে তিল ও লোম থেকে কুশের উৎপত্তি হয়। তাই তর্পণ ও অর্ঘ্যের সময় তিল ও কুশের ব্যবহার করা উচিত। শ্রাদ্ধে ব্রাহ্মণভোজের সবচেয়ে পুণ্যদায়ী সময় কুতপ, দিনের অষ্টম মুহূর্ত ১১টা বেজে ৩৬ মিনিট থেকে ১২টা বেজে ২৪ মিনিট পর্যন্ত থাকে।
শ্রদ্ধা সহকারে শ্রাদ্ধ করলে পূর্বপুরুষরা সন্তুষ্ট হন ও আশীর্বাদ দিয়ে পরলোক গমন করেন। শাস্ত্র মতে, পূর্বপুরুষদের শ্রাদ্ধকর্ম না-করলে তাঁরা রুষ্ট হন ও অভিশাপ পর্যন্ত দিতে পারেন।