এবার ৩১ অগস্ট গণেশ চতুর্থী পালন করা হবে। পৌরাণিক কাহিনি মতে, এদিনই গণপতি কৈলাস পর্বত থেকে মর্তে পা রাখেন। এদিন থেকে ১১ দিন পর্যন্ত তাঁর ভক্তরা পুজো, উপবাস, প্রার্থনা করেন। কিন্তু এর পাশাপাশি রয়েছে আরও একটি ঘটনা। কথিত আছে, সূর্য যখন সিংহরাশিতে থাকে তখন উভয় পক্ষে চতুর্থীতে চাঁদের দিকে তাকানো চলবে না। বঙ্গদেশে এই তিথিতে নষ্টচন্দ্র দর্শন পরিহার ব্রত পালন করেন অনেকে।
ভাদ্র মাসের দুই পক্ষের চতুর্থী তিথিতে ওঠা চন্দ্রকে ‘নষ্টচন্দ্র’ বলা হয়েছে পুরাণে। এই সময়ে চাঁদের দিকে তাকালে মিথ্যা কলঙ্কের ভাগী হতে হয় বলে বিশ্বাস করা হয়। এর পিছনে রয়েছে এক কাহিনি।
নষ্টচন্দ্রের কাহিনি
একবার কুবেরের বাড়ি থেকে নিমন্ত্রণের খাওয়া সেরে রাতে গণেশ কৈলাশে ফিরছিলেন। তখন সামনে একটি সাপ চলে আসে। চাঁদের আলোয় তাকে দেখে ভয় পেয়ে যায় গণেশের বাহন ইঁদুর। সে লাফিয়ে ওটে। আর তাতে গণপতি তার পিঠ থেকে পড়ে যান। এই দৃশ্য দেখে চন্দ্রদেব হেসে ওঠেন।
অনেকেরই বিশ্বাস, নিজের রূপের দম্ভের কারণই চন্দ্রদেব এমনভাবে উপহাস করে হেসেছিলেন। এতে গণেশ রেগে যান। তিনি চন্দ্রকে অভিশাপ দেন, তার প্রকাশ লুপ্ত হয়ে যাবে। সঙ্গে সঙ্গেই চন্দ্র হারিয়ে যান। চরাচরে অন্ধকার ছড়িয়ে পড়ে। দেবতারা চিন্তিত হয়ে পড়েন।
চন্দ্রদেব তখন গণপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। গণেশ শান্ত হন। কিন্তু বলেন যে, পক্ষে পক্ষে চন্দ্রকলার হ্রাসবৃদ্ধি হবে। এভাবে তিনি তাঁর দেওয়া শাপ লঘু করেন। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। গণপতি এর পরে বলেন, চতুর্থীতে চন্দ্র তাঁকে নিয়ে পরিহাস করেছিলেন। তাই চতুর্থীতে বিশেষতঃ ভাদ্র মাসের শুক্ল চতুর্থীতে চন্দ্রকে দর্শন করলে দর্শনকারী মিথ্যা কলঙ্কের ভাগীদার হবেন।
কোন ব্যক্তি যদি ভুল করে নষ্টচন্দ্র দর্শন করেন, তবে অবশ্যম্ভাবী মিথ্যা কলঙ্ক ভোগ হবে বলেই মনে করা হয় পুরাণে। তবে এটি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়ও আছে। সেটি খুব মজারও বটে। নষ্টচন্দ্র দর্শনকারী ব্যক্তি যদি নিকটবর্তী কোনও প্রতিবেশীকে আচম্বিতে জুতো ছুঁড়ে মারেন, তাহলে এই কলঙ্ক থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। সেই প্রতিবেশী যদি তাঁকে প্রচুর গালাগালি দেন, তবে নষ্টচন্দ্র দর্শন জনিত দোষ লাঘব হয় বলে মনে করা হয়।
আগে উল্লেখ করা বিষয়টি মজা করে বলা হলেও, নষ্টচন্দ্র দর্শন জনিত অপরাধ থেকে মুক্তি পাওয়ার শাস্ত্রীয় উপায় হল স্যমন্তক উপাখ্যান শ্রবণ। এই উপাখ্যান শ্রীমদ্ভাগবতের দশম স্কন্ধে বলা হয়েছে।