বাংলা বছরের শুরু হয় পয়লা বৈশাখ থেকে আর বাংলা বছরের শেষ হয় সংক্রান্তির মাধ্যমে। পয়লা বৈশাখের আগের দিন থাকে চৈত্র সংক্রান্তি। এই দিন হয় চড়ক পুজো বাঙ্গালীদের অন্যতম উৎসব। চড়ক পুজোর ঠিক আগের দিনই থাকে নীল ষষ্ঠী। নতুন বছরে প্রথম কয়েকদিন চড়ক পুজোর উৎসব চলতে থাকে।
এই বছর চড়ক পূজা ১৪ এপ্রিল শুক্রবার পড়েছে। যুগ যুগ ধরে চলে আসা চড়ক পুজোর সূচনা নিয়ে নানা রকম মতভেদ রয়েছে।
চড়ক পুজোর বেশ কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। চড়ক পুজোর আগের দিন অর্থাৎ নীল ষষ্ঠীর দিন চড়ক গাছকে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে, জলভরা একটি পাত্রে শিবের প্রতীক হিসেবে একটি লিঙ্গ স্থাপন করা হয়। এই প্রতীক শিবলিঙ্গটি বুড়ো শিব নামে পরিচিত।
বাংলায় চড়ক পুজো আরও অন্য নামেও পরিচিত যেমন শিবের গাজন গম্ভীরা পুজো ইত্যাদি নামে চড়ক পুজো হয়। চড়ক পুজো এক এক জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন নামে প্রচলিত।
চড়ক পুজোর সময় চরক গাছের সঙ্গে ভক্তদের লোহার হুক দিয়ে বেঁধে ঘুরানোর রীতি রয়েছে এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও লোহা গেঁথে দেওয়া হয়, যা কিনা খুবই যন্ত্রনামূলক পরিস্থিতি তৈরি করে।
১৮৬৫ সালে ব্রিটিশ সরকার আইন করে এটি বন্ধ করে দিয়েছিল তবে আজও গ্রাম বাংলার চড়ক পুজো পালিত হয়। মূলত কৃষি প্রধান অঞ্চল গুলিতে এই উৎসব বেশি করে পালিত হয়।
অনেকেই সারা চৈত্র মাস ভিক্ষা করে চড়ক পুজোর আয়োজন করে। নীল পুজো চৈত্র মাসের সংক্রান্তির আগের দিন। এই উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। আর পরের দিনই থাকে চড়ক পুজো।
লোক কথা অনুসারী ১৪৮৫ সালে সুন্দরানন্দ ঠাকুর নামে এক রাজা চড়ক পুজোর আয়োজন করেছিল। তবে চড়ক কিন্তু রাজবাড়ীর পুজো ছিল না। রাজবাড়ীর লোকেরা যদিও এই পুজোর আয়োজন করতো। এই পুজো হিন্দু ধর্মের লোকসংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। সাধারণত পুজো করার সময় ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের লোকেরা পুজো করেন। সব পূজোতেই সেরকমই নিয়ম কিন্তু চড়ক পুজোর নিয়ম একটু আলাদা শোনা যায়। চড়ক পুজোর সন্ন্যাসীরা অর্থাৎ যারা পূজারী তারা হিন্দু ধর্মের হলেও কোনও ব্রাহ্মণ পুরোহিতের প্রয়োজন পড়ে না। এই পূজোয় পৌরহিত্য করেন পতিত ব্রাহ্মণেরা। এই পুজোতে জলন্ত ছাইয়ের উপর দিয়ে হাটা কিংবা ছুড়ি বা ধারালো কোনও কিছুর উপর লাফানো, শিবের বিয়ে নিয়ে নৃত্য ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়। তবে বর্তমানে অনেক অনুষ্ঠান ভয়ঙ্করতার জন্যে অপসারণ করা হয়েছে।