প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক রেশন বণ্টন দুর্নীতিতে গ্রেফতার হওয়ার পরেই তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। এই অবস্থায় গত দুবছরে প্রচুর পরিমাণে রেশন কার্ড বাতিল হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। যার মধ্যে শুধুমাত্র মুর্শিদাবাদেই ৮ লক্ষ ২৬ হাজার রেশন কার্ড বাতিল হয়েছে। ২০২১ সাল থেকে এপর্যন্ত এই রেশন কার্ডগুলি বাতিল করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। বনমন্ত্রী গ্রেফতারের মাঝেই এমন তথ্য উঠে আসায় স্বাভাবিকভাবেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। এনিয়ে শাসকদলকে তীব্র কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা।
আরও পড়ুন: 'বাংলায় রেশন পরিষেবা বন্ধ করে দেব ডিসেম্বর থেকে', চরম হুঁশিয়ারি ডিলারদের
জানা গিয়েছে, রেশন কার্ডে জালিয়াতি রুখতে চালু হয়েছিল ডিজিটাল রেশন কার্ড। তারপর থেকেই ভুয়ো এবং অস্তিত্বহীন রেশন কার্ডের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এর পর সেগুলি চিহ্নিত করে ব্লক করার কাজ শুরু করে খাদ্য দফতর। ২০২১ সালে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে খাদ্য দফতর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, একই ব্যক্তির একাধিক রেশন কার্ড থাকার পাশাপাশি মৃত ব্যক্তির রেশন কার্ড এবং আধার কার্ডের সঙ্গে যুক্ত না হওয়ার জন্য এই রেশন কার্ড ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। আর এই নিয়ে রাজ্য শাসক দলকে আক্রমণ করতে শুরু করেছে বিরোধীরা।
বিজেপির বক্তব্য, রেশন দুর্নীতিতে জেলার অনেকেরই নাম রয়েছে। কংগ্রেসের বক্তব্য, রেশন দুর্নীতির জাল মুর্শিদাবাদেও বিস্তৃত। এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তবে তৃণমূলের দাবি, রাজ্য সরকার স্বচ্ছ বলেই এগুলি খতিয়ে দেখে এতগুলি রেশন কার্ড বাতিল করেছে। প্রত্যেকটা বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছে রাজ্য সরকার।
উল্লেখ্য, রাজ্যে নিখরচায় রেশন ব্যবস্থা চালু রয়েছে বহুদিন ধরে। বর্তমানে রাজ্যে প্রায় ১০ কোটি ৭০ লক্ষ রেশন কার্ড রয়েছে। ফলে প্রতিবছর বিপুল অঙ্কের টাকা এই বাবদ ব্যয় হয়ে থাকে রাজ্যের। মৃত ব্যক্তির নামে রেশন কার্ড বা একই ব্যক্তির নামে একাধিক রেশন কার্ড থাকার অভিযোগ রয়েছে ভুরি ভুরি। আধার সংযোগ প্রক্রিয়ায় পরে এই সমস্ত ভুয়ো রেশন কার্ড চিহ্নিত করতে তৎপর হয় রাজ্য সরকার। সেই প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর দেখা যায় রাজ্যে ৮ কোটি ৭৮ লক্ষ সঠিক রেশন কার্ড রয়েছে। বাকি ২ কোটি রেশন কার্ড নিষ্ক্রিয় করে দেয় রাজ্য সরকার। যদিও সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ দিতে পারলে নিষ্ক্রিয় হওয়া রেশন কার্ড পুনরায় সক্রিয় করা হবে।
সাধারণত একজন রেশন কার্ড গ্রাহক পিছু প্রতি মাসে পাঁচ কিলোগ্রাম করে খাদ্যশস্য বরাদ্দ থাকে। সেই হিসেবে একজন গ্রাহক পিছু প্রতি মাসে সরকারের খরচ প্রায় ১৫০ টাকা। ফলে ভুয়ো রেশন কার্ড শনাক্ত হওয়ায় বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হতে চলেছে রাজ্যের।