অতিবৃষ্টিতে ব্যাপকভাবে ফসলের ক্ষতি হয়েছে বিভিন্ন জেলায়। বানভাসী পরিস্থিতিতে ফসলের ক্ষতি হওয়ায় সবজির দাম বেড়ে গিয়েছে। এবার দুই মেদিনীপুর জেলায় ৬৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দুই জেলা কৃষি দফতরের রিপোর্ট এমনই। যা জেলা প্রশাসনের কাছে জমা পড়েছে। এবার সেই রিপোর্ট নবান্নে পৌঁছবে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুর, পাঁশকুড়া ও ময়না ব্লকে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আমন চাষের। আর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং, পিংলা, ডেবরা, নারায়ণগড় এবং ঘাটালে বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখনও পর্যন্ত মোট ৪৫৭ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে কৃষি দফতর সূত্রে খবর। তবে জেলাশাসকরা বিজ্ঞপ্তি জারি করলে ফসল বিমার আওতায় থাকা ক্ষতিগ্রস্তরা বিমার সুবিধা পাবেন।
বিষয়টি ঠিক কী ঘটেছে? অক্টোবর মাসের শুরুতেই ভারী বৃষ্টি এবং ডিভিসি’র জল ছাড়ার জেরে দুই মেদিনীপুরে বানভাসী পরিস্থিতি তৈরি হয়। কেলেঘাই এবং কংসাবতী নদীর জল বিপদসীমার উপর চলে যায়। দুর্গাপুজোর মুখে বানভাসী পরিস্থিতিতে ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নেয় কয়েকশো দুর্গত। ত্রাণশিবির চলতে শুরু করে। কংসাবতী নদীর জল লকগেট ভেঙে দেয়। তখন মেদিনীপুর মেন ক্যানেল দিয়ে একাধিক এলাকায় জল ঢুকে যায়। আর তাতেই ঘটে বিপত্তি। এই আবহে পড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় চাষবাসের। ফসল নষ্ট হয়। আমন চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ঠিক কী বলছে কৃষি দফতর? এই অতিবৃষ্টির জেরে হেক্টরের পর হেক্টর জমি জলের তলায় চলে যায়। এই বিষয়ে জেলা কৃষি দফতরের উপ অধিকর্তা (প্রশাসন) প্রবীণ মিশ্র জানান, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় মোট ২২ হাজার ৭৫৩ হেক্টর আমন ধানের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর বহু পান বরজ, ফুল এবং সবজি চাষের ক্ষতি হয়েছে। বেশকিছু পোলট্রি ফার্মে জল ঢুকে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দুর্গাপুজোর প্রাক্কালে পাঁশকুড়ায় ফুল চাষের ক্ষতি হয়েছে। এই কারণে উদ্যানপালন দফতরের মন্ত্রী অরূপ রায়ের কাছে ক্ষতিপূরণের আর্জি জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘পুরনোদের কথাও শোনা দরকার’, দলের অন্দরে ক্ষোভের আগুন নেভাতে পথদিশা দিলীপের
আর কী জানা যাচ্ছে? পশ্চিম মেদিনীপুরেও একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এখানে প্রায় ৪১ হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এখানে ৯০ শতাংশের বেশি আমন চাষের জমি আছে। বেশি ক্ষতি হয়েছে খড়্গপুরে। প্রায় ২৭ হাজার ৮০০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। সবংয়ে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর জমির ফসল জলের তলায় গিয়েছে। ডেবরাতেও সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর, পিংলা ব্লকে সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর, নারায়ণগড়ে সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ঘাটাল মহকুমায় প্রায় ১২ হাজার ৮০০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। আর ঘাটাল ব্লকে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমি জলের তলায় গিয়েছে। দাসপুর–১ ব্লকে দু’হাজার হেক্টর, চন্দ্রকোণা–১ ব্লকে এক হাজার ৭০০ হেক্টর ও চন্দ্রকোণা–২ ব্লকে ১১০০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এক কুইন্টাল ধানের সরকারি দাম ২১৮৩ টাকা। সেখানে ফসলের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪৫৭ কোটি টাকা।