হাটসেরান্দি গ্রামে এবার সেই উন্মাদনা নেই। তবু দুর্গাপুজো হচ্ছে নিয়মের তাগিদে। বাড়ির প্রধান কর্তাকে ছাড়াই করতে হচ্ছে দুর্গাপুজোর আয়োজন। নানুর থানার অন্তর্গত হাটসেরান্দি গ্রামের দুর্গাপুজো প্রত্যেক বছর আনন্দ–উল্লাসে ভরে ওঠে। পুজোর চারদিন সেখানে দেখা যেত রাজনৈতিক নেতাদের। এবার তা আর দেখা যাবে না। কারণ বাড়ির বড়কর্তা এখন জেলে। তাই এই বছর একেবারেই ম্লান তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল তথা কেষ্টর গ্রামের বাড়ির দুর্গাপুজো।
কেন দেখা যাবে না আগের ছবি? এখানে কেষ্টকে ছাড়া দুর্গাপুজোর এই বৃহৎ আয়োজন সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন সকলে। একাধিকবার অনুব্রত মণ্ডল জামিনের আবেদন করেছেন। কিন্তু সেই জামিনের আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং দুর্গাপুজো এবার জেলেই কাটাতে হবে কেষ্টকে। গরু পাচার মামলায় তাঁকে সিবিআই গ্রেফতার করেছে। কিন্তু সেভাবে আদালতে যুৎসই প্রমাণ দিতে পারেনি। তাই ভাবা হচ্ছিল ছাড়া পাবে কেষ্ট। কিন্তু সিবিআই তাঁকে প্রভাবশালী তকমা দেওয়ায় এখন আসানসোলের জেলেই কাটাতে হবে দুর্গাপুজো। প্রত্যেক বছর বাড়ির পুজোয় অংশ নিয়ে এলাকায় মাতিয়ে রাখতেন। এবারই হবে তার ব্যতিক্রম। ফলে পুরনো ছবি অমিল।
কবে থেকে এখানে দুর্গাপুজো হয়? জানা গিয়েছে, মণ্ডল পরিবারের এটাই আদি পুজো। এই গ্রামে পুজো হচ্ছে ৮০ বছর ধরে। অনুব্রত মণ্ডলের দাদুর বাবা গৌরহরি মণ্ডল এই পুজো শুরু করেছিলেন। এখানে বিসর্জনের পর সারা বছর পিতলের দুর্গামূর্তিতে চলে নিত্যপুজো। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সারা বছর নানা জায়গায় থাকলেও দুর্গাপুজোর সময় সবাই গ্রামে চলে আসতেন। কেষ্ট সবাইকে নিয়ে পুজোয় পারিবারিক আনন্দে মেতে উঠতেন। আশপাশের গ্রাম থেকেও মানুষ আসতেন। রাজ্যের বহু নেতা–মন্ত্রী পুজোর সময় এই গ্রামে এসে হাজির হন। পুলিশের নিরাপত্তা থাকত চোখে পড়ার মতো। এখন সবই অতীত।
আর কী জানা যাচ্ছে? এবার কেষ্টকে ছাড়া তাই নামমাত্র পুজোর আয়োজন করা হচ্ছে। এই বিষয়ে অনুব্রত মণ্ডলের এক আত্মীয় বিজলি মণ্ডল বলেন, ‘ঘরের লোক ঘরে থাকলে ভাল লাগে৷ অনেক আয়োজন করা যায়। খারাপ লাগছে এবার থাকবে না৷ প্রত্যেক বছর দুর্গাপুজোয় আসত। কত পুলিশ আসত। লোকজন আসত। খাওয়া–দাওয়া আনন্দ হতো। এবার মন খারাপ লাগছে।’