লরিটি তখন ছুটে চলছিল। আর তার মধ্যেই ১০ কোটি টাকার আইফোন লুট করার অভিযোগ উঠল। লরিটি আসছিল চেন্নাই থেকে। কলকাতায় আসছিল। কিন্তু অভিনব কায়দায় চুরি করা হয় দামি মোবাইলগুলি বলে অভিযোগ। বাংলায় লরিটি ঢুকতেই মোবাইলগুলি চুরি করা হয় বলে অভিযোগ। কিন্তু চুরির কাহিনী শুনে হতবাক কলকাতা হাইকোর্ট। এজলাসে উপস্থিত আইনজীবীদের মনে হচ্ছিল তাঁরা গল্প শুনছেন। পুলিশ সূত্রে খবর, চুরি যাওয়া বহু মোবাইল এখনও চালু রয়েছে। সুতরাং এটা বোঝা যাচ্ছে, দু’মাস আগে লুট হওয়া বেশকিছু মোবাইল অন্যত্র বিক্রি হয়েছে। তাই জেলার পুলিশ সুপারের নজরদারিতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
এদিকে ২০২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর চেন্নাই থেকে একটি লরি কলকাতায় আসছিল। তাতে মোট ৯.৭০ কোটি টাকা মূল্যের অ্যাপলের আইফোন ছিল। লরির গতিবিধির উপর নজর রাখতে অত্যাধুনিক ‘জিপিএস সিস্টেম’ ব্যবহার করে পরিবহণ সংস্থা। তবে পরের দিন ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বাংলায় প্রবেশ করে। আর ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টা নাগাদ পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি পেট্রল পাম্পে লরিটি ৫ মিনিটের বেশি দাঁড়ায়। তখনই চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও ফোনে পাওয়া যায়নি। তখন ডেবরা থানায় খবর দেয় পরিবহণ সংস্থাটি। লরিটি উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ দেখে লরিটি ফাঁকা। গাড়িতে কোনও আইফোন নেই। চালক, খালাসি কেউ নেই।
অন্যদিকে ওই পরিবহণ সংস্থার আইনজীবী অপলক বসু সওয়াল করেন, অনুমান করা হচ্ছে চলন্ত অবস্থাতেই ওই লরি থেকে আইফোনগুলি চুরি গিয়েছে। কারণ, চুরির আগে গাড়িটি কোথাও বেশিক্ষণ দাঁড়ায়নি। ওই চুরি ডেবরার টোলপ্লাজার আগে শেষ করা হয়েছে। যাতে ধরা না পড়ে। তাই লরিটি ফেলে রেখে চালক, খালাসি চম্পট দেয়। ওই আইনজীবী কলাকাতা হাইকোর্টে দাবি করেন, চুরির পরে ফোনগুলি যাতে অন্যত্র বিক্রি করা না যায় তার জন্য পুলিশকে বলা হয়েছিল। এমনকী পুলিশ প্রথমে এফআইআর পর্যন্ত নেয়নি। ১০ অক্টোবর ওই ঘটনায় এফআইআর দায়ের হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
আরও পড়ুন: কলকাতা পুরসভায় চালু হল বায়োমেট্রিক হাজিরা ব্যবস্থা, সব বরো অফিসেও করার পরিকল্পনা
এছাড়া পুলিশের তদন্তে ভরসা রাখতে না পেরে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় পরিবহণ সংস্থাটি। কলকাতা হাইকোর্টে পরিবহণ সংস্থার আইনজীবীর বক্তব্য, সারা দেশ জুড়ে পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত এই সংস্থা। এমনকী সুনাম রয়েছে। কিন্তু কোটি টাকার আইফোন লুট হওয়ায় সংস্থার ভাবমূর্তি খারাপ হয়েছে। ঠিক করে তদন্ত করছে না পুলিশ বলে অভিযোগ। তাই তদন্তভার সিআইডিকে দেওয়ার কথা বলা হয়। যদিও রাজ্য এসব অস্বীকার করে। রাজ্যের আইনজীবী জানান, এফআইআর দায়ের হওয়ার পরে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। আইফোনের ‘আইএমইআই কোড’ চোরেরা নিষ্ক্রিয় করেছে। আবার বিক্রিও হয়ে গিয়েছে। সওয়াল–জবাব শোনার পর বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের নির্দেশ, জেলার পুলিশ সুপারকে এই তদন্তে নজরদারি করতে হবে। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানি।