দু’দিন আগেই দিলীপ ঘোষকে ঘিরে বিজেপি কর্মীদের বিক্ষোভ প্রদর্শন সামনে এসেছিল। এবার সামনে আসছে এই ঘটনার পেছনে রয়েছে বিজেপিরই হাত। ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপ সেই সাক্ষ্য বহন করছে। এখন প্রশ্ন, তাহলে কী রাজ্য সভাপতির গ্রহণযোগ্যতা কমে গিয়েছে? দলের অন্দরেই এই চোরা স্রোত কেন? ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপটি বিজেপির হুগলি জেলার (সাংগঠনিক) প্রাক্তন সভাপতি সুবীর নাগ এবং এক দলীয় কর্মীর টেলিফোনের কথোপকথনের। যদিও সেই অডিও ক্লিপের সত্যতা যাচাই করেনি হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা ডিজিটাল।
একুশের নির্বাচনে দলের পরাজয়ের পেছনে বিজেপি রাজ্য সভাপতি নেতৃত্বকে দায়ী করছেন বহু নেতা–কর্মী। এই ফলাফলের পর হুগলিতে যান দিলীপ ঘোষ। সেখানের চুঁচুড়ায় জেলা কার্যালয়ে বৈঠক করেন। আর বৈঠক থেকে বেরোনোর সময় তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মীরা। তখন তিনি মেজাজ হারিয়ে ফেলেন। বিজেপির হুগলি জেলা (সাংগঠনিক) সভাপতি গৌতম চট্টোপাধ্যায় এবং রাজ্য সম্পাদক দীপাঞ্জন গুহকে অপসারণের দাবিতে হয় বিক্ষোভ। প্রার্থী নির্বাচন নিয়েও ফেটে পড়েন কর্মীরা। এই নিয়ে যখন বিতর্ক উচ্চগ্রামে উঠেছে তখনই প্রকাশ্যে এলো এই অডিও ক্লিপ।
অডিয়ো ক্লিপে যে কথোপকথন শোনা গিয়েছে তা তুলে ধরা হল। এক নেতা— শোন, আজকে দিলীপ’দা বিকেলে আসছে।
বিজেপি কর্মী—আচ্ছা।
এক নেতা—তোর তো অনেক কথা আছে। যারা তোর অনুগামী তাদের নিয়ে চলে যাবি। দিলীপ’দার সামনে বিক্ষোভটা হোক।
বিজেপি কর্মী—আচ্ছা।
এক নেতা—অনেকেই অনেক কথা বলবে। ক্ষোভ উগরে দেবে। তুই তো ভাল বলতেও পারিস। যে কথা আমাকে বলেছিলি, সেটা দিলীপ’দাকে বলবি।
বিজেপি কর্মী—ঠিক আছে।
এক নেতা— আজকে যদি ঠিকঠাক ক্ষোভ উগরে দেওয়া যায়, তা হলে মোটামুটি আশা করা যায় কিছু একটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে।
বিজেপি কর্মী—ঠিক আছে।
এক নেতা— বলতে হবে, আপনি আসেননি কেন এত দিন? জেলায় আজকে ৭ খানা বিধানসভা আসন জেতা। সেখান থেকে একটা আসনও জিততে পারলেন না। এর দায় আপনারা নেবেন না? শুনবেন না আমাদের কথা?
বিজেপি কর্মী—একদম।
এক নেতা—আমার বিধানসভায় অন্য একটা লোককে টিকিট দেওয়া হল, কার স্বার্থে?
বিজেপি কর্মী— আজকে বিকেলে তাই তো? পার্টি অফিসে ঢোকার আগেই কি রাস্তা আটকে দেব না কি?
এক নেতা— যা হবে, যা।
বিজেপি কর্মী—ঠিক আছে।
এক নেতা—বিক্ষোভ দেখিয়ে গেটের সামনে অবস্থান করে ফেলা। দিলীপ ঘোষ যেন টের পায় যে এই জেলা চলছে না। ঠিক আছে?
বিজেপি কর্মী—ঠিক আছে। ভাল হল জানিয়ে দিলেন।
এই অডিও ক্লিপ নিয়ে হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘পার্টির একজন পুরনো নেতার এই কথা শুনে কী বলব, বুঝতে পারছি না।’ ইতিমধ্যেই এই অডিও ক্লিপ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। এখন বিজেপির কোনও পদে নেই সুবীর। তারকেশ্বরে স্বপন দাশগুপ্তের প্রচারে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সুবীর। তিনি বলেন, ‘এখন ডিজিটাল যুগে অনেক কিছুই সম্ভব। আমার মতো করে কথা বলা হয়েছে ওই ক্লিপে। এটা আমাকে এবং দলকে কালিমালিপ্ত করার জন্য করা হয়েছে। যাঁর গলা শোনা যাচ্ছে তাঁর সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। একটা চক্র আমার বিরুদ্ধে কাজ করছে।’