বামফ্রন্ট সরকারের সময় চিরকূটে চাকরি হতো বলে অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস এবং তার নেতারা। রোজই একটা করে টুইটের সঙ্গে নথি প্রকাশ করছেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। আর তা নিয়ে রাজ্য–রাজনীতি সরগরম। এই আবহে সামনে এসে নিজে চাকরি দেওয়ার কথা স্বীকার করলেন একদা শাসনের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা মজিদ মাস্টার। তবে একইসঙ্গে তাঁর দাবি, বামফ্রন্ট জমানায় চিরকূটের মাধ্যমে অর্থাৎ সুপারিশে চাকরি হয়ে থাকলে তা নিয়ে তদন্ত করে উপযুক্ত পদক্ষেপ করুক তৃণমূল সরকার।
ঠিক কী বলেছেন মজিদ মাস্টার? শুক্রবার বারাসত আদালতে এসেছিলেন তিনি। আর সেখানে তিনি বলেন, ‘আমি রাস্তার লোক। চিরকুট দেখে চাকরি দেওয়ার ক্ষমতা আমার ছিল না। তবে আমাদের স্কুলে একবার নিয়োগের প্রয়োজন হয়েছিল। আমারই এক ছাত্রীকে ডেকে এনে স্কুলে চাকরি দিয়েছিলাম। অনেকেই আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তফসিলি জাতির ওই মেয়েটিকেই কাজটা দিয়েছিলাম’। এই বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন সিপিএমের এককালের দাপুটে নেতা মজিদ আলি ওরফে মজিদ মাস্টার। তাঁর মন্তব্য, একদা তিনি পঞ্চায়েতের কিছু কাজকর্ম করলেও চাকরি করিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না তাঁর।
ঠিক কী জানা যাচ্ছে? বামেদের যখন ভরা বাজার, ক্ষমতার তুঙ্গে, তখন বিরোধী দলগুলির কাছে ত্রাস ছিলেন এই মজিদ মাস্টার। তবে ক্ষমতার পরিবর্তনের পর গ্রামছাড়া মজিদ মাস্টার ২০১৫ সালের পর থেকে সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে যান। কয়েক বছর আগে অবশ্য শাসনে নিজের বাড়িতে ফিরেছেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আদালতে ঝুলছে। শুক্রবার তেমনই একটি মামলায় বারাসত আদালতে হাজির হয়েছিলেন। আদালত থেকে বেরিয়ে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে মজিদ মাস্টার বলেন, ‘বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। আমি মন্তব্য করব না। তবে সিপিএম যদি চিরকুট দিয়ে চাকরি দিয়ে থাকে, তবে বর্তমান সরকার তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিক।’
আর কী বলেছেন মজিদ আলি? রাজ্যজুড়ে যখন নিয়োগ নিয়ে জলঘোলা হচ্ছে, তখন মজিদ মাস্টারের এই বক্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনীতিবিদরা। তৃণমূলের বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায় এবং উদয়ন গুহ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘উদয়ন গুহকে আমি দেখিনি। তবে তাপসকে কাছ থেকে দেখেছি। তাঁরা কী বলেছেন, তা আমি জানি না। তবে এলাকার ছেলেমেয়েদের জন্য নেতা ও মন্ত্রীদের কাছে তদ্বির করেছিলাম। একইসঙ্গে নিজের মেয়ের চাকরির জন্যও নেতাদের বলেছিলাম। কিন্তু কেউই চাকরি পায়নি। একবার কাওড়াপাড়ার আমার এক ছাত্রীকে ডেকে এনে আমাদের স্কুলে চাকরি দিয়েছিলাম। অনেকে দরখাস্ত করেছিলেন। আমি বলেছিলাম, কাওড়াপাড়ার ওই মেয়েটিকে চাকরি দিলে তফসিলিদের মধ্যে উৎসাহ জাগবে। তাই করেছি।’