যেকোনও বড় ধরনের রোগের ক্ষেত্রে রোগীদের অন্যতম ভরসার স্থল হল কলকাতার সরকারি হাসপাতালগুলি। সেই কারণে প্রতিদিন বহু জেলা থেকে দূর দূরান্তের মানুষ চিকিৎসার জন্য কলকাতার সরকারি হাসপাতালে ভিড় করেন। কিন্তু, উলটো ছবি দেখা গেল দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের জেলা, স্টেট জেনারেল ও মহকুমা স্তরের হাসপাতালগুলিতে। এই হাসপাতালগুলিতে স্ট্রোক হওয়া রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করেছে স্বাস্থ্য ভবন। আর তাতে ব্যাপক সাফল্য মিলেছে। বারুইপুর মহকুমা হাসপাতাল, বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল এবং ক্যানিং হাসপাতাল গত মাসে সবচেয়ে বেশি স্ট্রোক হওয়া রোগীর প্রাণ বাঁচাল। এর জন্য হাসপাতালগুলিকে কুর্নিশ জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস (বিআইএন) হাসপাতালগুলিকে নোডাল হাসপাতাল করে এই হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা হয়েছে।
আরও পড়ুন: চোখে স্ট্রোক! সাবধাণ, না হলে চলে যেতে পারে দৃষ্টিশক্তি
স্বাস্থ্য দফতর সুত্রে জানা গিয়েছে, কোনও রোগীর স্ট্রোক হলে দ্রুত চিকিৎসা না হলে রোগীর প্যারালাইসিস এবং মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই স্ট্রোক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত চিকিৎসা হলে রোগীকে সুস্থ স্বাভাবিক করে তোলা সম্ভব। আর সে সেক্ষেত্রে এই হাসপাতালগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাতে যেমন বিআইএনের উপরে চাপ কমার পাশাপাশি গোল্ডেন আওয়ারের মধ্যে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত অক্টোবরে বারুইপুরে ১২ জন, বিদ্যাসাগরে ১১ জন এবং ক্যানিংয়ে ৯ জন স্ট্রোকের রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়েছে। স্বাস্থ্য ইঙ্গিত প্রকল্পে বিআইএন হাসপাতালের সঙ্গে টেলি-যোগাযোগের মাধ্যমে স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করছে এই হাসপাতালগুলি। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, ওই রোগীদের একজনও স্ট্রোক পরবর্তী প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হননি।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের যে কোনও হাসপাতালের ক্ষেত্রে স্ট্রোকের চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল অফিসার বিআইএন–এর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এক্ষেত্রে কারও স্ট্রোক হলেই বিআইএন–এর সঙ্গে পরামর্শ করে প্রথমে রোগীর সিটি স্ক্যান করে দেখা হয়। এরপর মাথায় রক্ত জমাট বেঁধে থাকলে বিশেষ ধরনের ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। যদিও বারুইপুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, রোগী পরিবারের সচেতনতা, হাসপাতালের চিকিৎসক এবং নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীদের নিষ্ঠার জন্য এই সাফল্য সম্ভব হয়েছে।
তবে মাত্র দুজন রোগীকে বারুইপুর হাসপাতাল থেকে বিআইএন–তে পাঠানো হয়েছিল। প্রসঙ্গত, উৎসবের সময় যেখানে বেশিরভাগ হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা তলানিতে ছিল সে ক্ষেত্রে বারুইপুরের হাসপাতালগুলির সাফল্য অন্যান্য হাসপাতালগুলিকে অনুপ্রাণিত করবে বলেই মনে করছে স্বাস্থ্য দফতর। এই অবস্থায় ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাইছে হাসপাতালগুলি।