বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলেছেন একাধিক সভা থেকে, একশো দিনের টাকা দিয়ে দিন। ওটা গরিব মানুষের টাকা। কাজ করে প্রাপ্য না পেলে গরিব মানুষের সংসার চলবে না। কিন্তু এত অনুরোধেও মেলেনি টাকা। তাই নিতে হচ্ছে বৃহত্তর আন্দোলনের পথ। এই পরিস্থিতিতে একশো দিনের কাজ করে টাকা না পেয়ে সংসারে অভাব দেখা দিয়েছিল গড়বেতার এক দম্পতির। অবশেষে দুই সন্তানকে নিয়ে সংসার টানতে না পেরে আত্মঘাতী হলেন দম্পতি। আর বাবা–মাকে হারিয়ে দিশাহারা দুই নাবালক সন্তান। গড়বেতার চড়কডাঙায় এই মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে এখন তুঙ্গে উঠেছে চর্চা।
পুলিশ কী তথ্য পেয়েছে? পুলিশ সূত্রে খবর, মৃত দম্পতির নাম সন্তু দুলে (৪০) এবং রীতা দুলে (৩৫)। এই দম্পতির দুই সন্তান রয়েছে। এক মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়েটির নাম শিউলি দুলে। সে দশম শ্রেণিতে পড়ে। আর ছেলে ঋষি দুলে। সে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। এই দম্পতির আদি বাড়ি চন্দ্রকোণা টাউন এলাকায় হলেও বহু বছর ধরে তাঁরা গড়বেতাতেই সন্তুর জেঠিমা সরস্বতী দুলের সঙ্গেই থাকতেন। আজ, শুক্রবার স্কুলে যাওয়ার আগে ছেলে ঋষি বাবা–মায়ের ঘরে ঢুকে পড়ে। আর তাখনই দু’জনের দেহ দেখতে পায় সে। সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে ওঠে।
কেন আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন দম্পতি? স্থানীয় সূত্রে খবর, সন্তু গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গাছ কাটার কাজ করতেন। সেটা কমে এসেছিল। কাজকর্ম ভাল জুটছিল না। তবে ওই দম্পতি একশো দিনের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁদের জব কার্ডও রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কয়েক হাজার টাকা বাকি পড়ে রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার টাকা পাঠাচ্ছে না বলে অভিযোগ। তাই অভাব–অনটনে দিন কাটছিল। ছেলে–মেয়েদের মুখে ভাত তুলে দিতে পারছিলেন না। এই কঠিন পরিস্থিতিতে তাঁরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। আর তা থেকে মুক্তি পেতে স্ত্রী রীতা বিষপান করেন। আর স্বামী সন্তুর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় বাড়ি থেকে। যা নিয়ে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে।
আর কী জানা যাচ্ছে? এই একশো দিনের টাকা না পাওয়ার কথা তাঁরা অনেককে বলে ছিলেন। সাহায্যও চেয়েছিলেন। কিন্তু রোজগারহীন দম্পতি টাকা শোধ করবেন কী করে? এই প্রশ্ন মনে আসায় কেউ সাহায্য করেননি। অবশেষে চরম পথ বেছে নিয়েছেন তাঁরা। ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান শ্যামল বাজপেয়ী। দুই নাবালক সন্তানকে সাহায্যের আশ্বাস দেন। গড়বেতা পঞ্চায়েত সমিতির সহ–সভাপতি সেবাব্রত ঘোষ বলেন, ‘কেন্দ্রের বিজেপি সরকারই এই ঘটনার জন্য দায়ী। একশো দিনের কাজে অর্থবরাদ্দ আটকে রাখায় গ্রামের গরিব মানুষরা কাজ করেও টাকা পায়নি। তাই এবার তাঁরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন।’