কারও হাত নেই আবার কারও পা নেই, আবার কেউ দুটোই হারিয়েছেন। নিমতিতা রেল স্টেশনে ভয়াবহ বিস্ফোরণে হাত-পা বাদ গিয়েছে অনেকেরই। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীদের হাত পা না থাকায় এখন কিভাবে তারা সংসার চালাবেন সেই চিন্তা তাদের কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। এই অবস্থায় কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীর দ্বারস্থ হন আহতরা।
বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগেই জঙ্গিপুরের বিধায়ক জাকির হোসেনকে লক্ষ্য করে ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। সেই ঘটনায় বিধায়ক জাকির হোসেনের ২৭ জন অনুগামী আহত হয়েছিলেন। হাত পা হারিয়ে ছিলেন নাসির উদ্দিন নামে এক যুবক। বাকিরা কেউ হাত, কেউ পা আবার কেউ আঙুল হারিয়েছিলেন। ঘটনার পরে আহতদের ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, সে ক্ষতিপূরণের টাকা শেষ হয়ে গেছে। চিকিৎসার জন্য আর তাদের কাছে টাকা নেই। এখন তারা কীভাবে সংসার চালাবেন সেটাই তাদের কাছে চিন্তার বিষয়।
কৃষ্ণ রায় নামে ঘটনায় আহত এক যুবক কলেজ পড়ুয়া। তাঁর স্বপ্ন ছিল কলেজে শেষে বড় কোনও জায়গায় তিনি চাকরি করবেন। এখন তাঁর সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘আমার একটা স্বপ্ন ছিল। একটা টার্গেট করেছিলাম। কিন্তু, সে স্বপ্ন থেকে পিছিয়ে গিয়েছি। এখন সরকার আমাদের চাকরি না দিলে কীভাবে আমাদের সংসার চলবে জানি না। আমাদের মৃত্যু ছাড়া কোনও আর কোনও রাস্তা নেই।’ আনিস সোহেল নামে ঘটনায় আহত আরও এক যুবকের কথায়, ‘আমরা পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। আমাদের উপার্জনেই সংসার চলত এখন আমাদের হাত পা নেই। টাকাও শেষ, কীভাবে সংসার চলবে জানি না। এখন সরকার আমাদের না দেখলে কোনও মৃত্যু ছাড়া কোনও উপায় থাকবেনা।’ একইসঙ্গে, ঘটনায় জড়িতদের এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করতে না পারার জন্য এনআইএ তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন।
এই সমস্ত দাবি-দাওয়া নিয়ে বৃহস্পতিবার তারা অধীর চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেন। অধীর চৌধুরী নিজের সাধ্যমত তাদের কথা মুখ্যমন্ত্রী এবং রেলমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আহতদের চাকরি দেওয়ার বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী এবং রেল মন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাবো।’ একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁর আর্জি, ‘মুখ্যমন্ত্রী তো অনেক ভাতায় দিয়ে থাকেন। তাহলে আহতদেরকেও ভাতা বা চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। এটা হলে অন্তত এদের সংসার চলবে।’ এর পাশাপাশি এনআইএ তদন্ত নিয়েও সমালোচনা করেন।