রবিবাসরীয় ছুটিতে বিকট আওয়াজে কেঁপে উঠল পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির জুনপুট। আর সেই বিকট শব্দেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ওই এলাকার মৎস্যজীবীরা। কারণ জনবসতির ঢিল ছোঁড়া দূরত্বেই তৈরি হচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র। তাই সেখানে কিছু ঘটল কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। যদিও আতঙ্কের মধ্যেই খবর মেলে ওই এলাকায় চলছে জেলা পুলিশের ‘অ্যানুয়াল মাস্কেটিং’ প্রশিক্ষণ শিবির। কিন্তু সে খবরের কেউ যেন তোয়াক্কাই করলেন না। বরং মৎস্যজীবীরা জুনপুট উপকূল থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, উত্তেজিত জনতা তখন ওই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের লঞ্চপ্যাডে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। সেখানে একটি টিনের দরজাও ভেঙে দেওয়া হয়।
এদিকে বেশ কিছুদিন ধরেই এখানকার মানুষজন আতঙ্কে আছেন। কারণ কাঁথি থেকে সাত কিলোমিটার দূরে জুনপুট। সেখানে ‘ডিআরডিও’ গড়ে তুলেছে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র। ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের সময় চাষবাস থেকে মানুষের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই কাঁথি–১ ব্লকের বিরামপুট এবং দেশপ্রাণ ব্লকের চেচড়াপুটের বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে কেমন ক্ষতি হবে তা কেউ জানেন না। আশঙ্কা থেকেই উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে। এই আবহে রবিবার দুপুরে ওই এলাকায় বিকট শব্দ হয়। তাতে আতঙ্কিত হন মৎস্যজীবীরা। এই শব্দের তীব্রতায় এক শিশু ও দুই মহিলা সংজ্ঞা হারান বলে স্থানীয় সূত্রে খবর।
অন্যদিকে এই খবর মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় বিক্ষোভ। এলাকার সাধারণ মানুষ থেকে মৎস্যজীবীরা জুনপুট উপকূল থানায় বিক্ষোভ দেখান। কাঁথি থেকে জুনপুটগামী রাজ্য সড়ক বেশ কয়েক ঘণ্টা অবরোধ করেন তাঁরা। ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র করতে দেওয়া চলবে না বলে স্লোগান তোলেন তাঁরা। বেশ কয়েকজন মৎস্যজীবী মিলিতভাবে বলেন, ‘শুনেছি ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে এখানে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ হবে। তা হওয়ার আগেই বিকট আওয়াজ শুনে সকলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।’ এই আবহে কাঁথি–১ পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেতা আমিন সোহেল বলেন, ‘আমরা এখানের মানুষজনকে মরতে দেব না। ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র যাতে না হয় তার জন্য আন্দোলন হবে।’
আরও পড়ুন: ইডি অফিসারদের সুরক্ষায় আসছে বাড়তি কেন্দ্রীয় বাহিনী, ভয়ের নেপথ্যে কারণ কী?
এছাড়া এলাকার মানুষজনের এমন সম্মিলিত প্রতিরোধে বাতাবরণ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তখন পরিস্থিতি শান্ত করতে আসরে নামে পুলিশ। মানুষজনকে বোঝানো হয় তারা সবদিক খতিয়ে দেখছেন। এই বিষয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘জেলা পুলিশের প্রশিক্ষণের অঙ্গ হিসেবে জুনপুটে শিবির হয়েছিল। এলাকাবাসী ভুল ভেবেছিলেন। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটেছে।’ তবে সেখানে কেমন করে জেলা পুলিশের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি হল সেটা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। আর পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক তনবীর আফজল বলেন, ‘কবে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা হবে সেটা এখনও পর্যন্ত ডিআরডিও চূড়ান্ত করে জানায়নি।’