মুখভার ছিল আকাশের, দুপুর থেকেই বৃষ্টি হচ্ছিল। এরইমধ্যে খবরটা আসে হাসিখুশি ছেলেটা আর নেই - আত্মহত্যা করেছেন। কথাটা যেন কোনওভাবেই বিশ্বাস করতে চাইছেন না। কীভাবে বা চাইবেন? বলিউডের স্টারের তকমা সরিয়ে রেখে সুশান্ত সিং রাজপুত যে আপন হয়ে উঠেছিলেন খড়্গপুরবাসীর।
সুশান্তের সঙ্গে রেলশহরের সম্পর্কের শুরু ২০১৫ সালে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বায়োপিকের শ্যুটিংয়ে খড়্গপুরে এসেছিলেন সুশান্ত। আইআইটির একটি অতিথি ভবনে ছিলেন। কিন্তু খড়গপুরের অতিথি হিসেবে থেকে যাননি সুশান্ত। বাস্তবের ধোনির চাকরির জীবনের সময় যেখানে যেখানে যেতেন, সেখানে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন। অবাধ বিচরণ ছিল খড়গপুর স্টেশন, সেরসা স্টেডিয়াম-সহ বিভিন্ন জায়গায়। কারোর দোকানে চা খেয়েছিলেন, কারোর কাছে জিম করার আবদার করেছিলেন। বাইকে চেপে নিজেই ফুচকা খেতে গিয়েছিলেন। সবার সঙ্গে দাঁড়িয়ে খেয়েছিলেন।
ধোনির সহকর্মী, পরিচিতদের সঙ্গেও সুশান্তের হৃদ্যতা গড়ে ওঠে। তেমনই একজন দীপক সিং। যিনি ধোনির সঙ্গে একই রেল কোয়ার্টারে থাকতেন। তাঁর সঙ্গে কয়েকদিন ছিলেনও সুশান্ত। আর সেই সুশান্তের মৃত্যুর খবর পেয়ে বিহ্বল দীপক। তিনি জানান, ধোনি কী করতেন, কীভাবে কাটাতেন, কোথায় খেলতেন - সব খুঁটিয়ে জানতেন রুপোলি পর্দার মাহি। ধোনির মতো সুশান্তের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। একসঙ্গে বাইক নিয়ে বেরোতেন, সেরসা স্টেডিয়ামে চুটিয়ে ক্রিকেট খেলতেন। একবার নাকি সুশান্ত রাত এগারোটার জিম করবেন বলেছিলেন। তখন বন্ধুর জিম খুলিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। সেইসব কথাগুলো বলতে বলতে দীপকের চোখের কোণটা চিকচিক করছিল। গলায় অস্বস্তিটা দলা পাকানো অস্বস্তির সঙ্গে দীপকের মনের মধ্যে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে - সুশান্তের মতো ছেলে কীভাবে আত্মহত্যা করতে পারেন!
হতবাক এলাকার বর্তমান বিধায়ক প্রদীপ সরকার। যিনি ২০০৫ সালে ধোনির হাতে একটি ক্রিকেট প্রতিযোগিতার ট্রফি তুলে দিয়েছিলেন। পরে ২০১৫ সালেও রিল লাইফের মাহির হাতেও সেই ট্রফি দিয়েছিলেন তৎকালীন পুরপ্রধান। তিনি জানান, সুশান্তের সঙ্গে বিভিন্ন কথাবার্তা হয়েছিল। বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাইতেন। সুশান্তের মৃত্যু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। একই প্রতিক্রিয়া সাউথ সাইডের এক চা-বিক্রেতারও। সাউথ ইনস্টিটিউটের পাঁচিল ঘেঁষা দোকানের মালিক জানান, একদিন সুশান্ত তাঁর দোকানে চা খেতে এসেছিলেন। প্রথমে তো ধোনি ভেবে ভুল করেছিলেন।
সুশান্তের মৃত্যুর খবর শুনে খড়্গপুরবাসী সেটাই হয়ত ভেবেছিলেন, কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। ভুলটা খুব তাড়াতাড়ি শুধরে যাবে। শেষপর্যন্ত ভুলটা আর শোধরায়নি। মাত্র সপ্তাহ তিনেকে যে ছেলেটা নয়নের মণি হয়ে উঠেছিলেন, তাঁর মৃত্যুতে বিষণ্ণ হয়ে পড়েছে রেলশহর।