বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ, বাংলায় রামায়ণের রচয়িতা কৃত্তিবাস ওঝার স্মৃতিতে তৈরি লাইব্রেরি খোলার লোক নেই। অথচ ১৪টি ভাষায় অনুদিত রামায়ণ রয়েছে সেখানে। রোজ লাইব্রেরিতে সেই সব বই বই পড়তে গিয়ে নিরাশ হয়ে ফিরছেন গবেষক ও ছাত্রছাত্রীরা। এমনকী স্কুল থেকে শিক্ষামূলক ভ্রমণে গিয়েও গ্রন্থাগার খোলাতে পারেননি দিদিমণিরা। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি সরকারের ভাষা দিবস উজ্জাপন কি শুধুই লোক দেখানোর জন্য। আদপে বাংলা ভাষার ঐতিহ্য ও গরিমা নিয়ে মাথাব্যাথা নেই তাঁদের।
আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস গিয়েছে এখনও পক্ষকাল কাটেনি। ভাষা দিবস উজ্জাপনে রাজ্য সরকারের সরকারের জাঁকজমকও স্মৃতিতে টাটকা। জোড়া অনুষ্ঠানে কলকাতা ও শিলিগুড়িতে বক্তব্য রেখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই বাংলার শান্তিপুরের বয়ড়া গ্রামে কৃত্তিবাস ওঝার স্মৃতিতে তৈরি লাইব্রেরির তালা খোলার লোক নেই।
রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ১৯৬০ সালে কৃত্তিবাসের স্মরণে একটি গ্রন্থাগার ও একটি ইউনিটি হল তৈরি করেছিল রাজ্য সরকার। ১৯৬৪ সালে একটি নতুন ভবন তৈরি করে রাজ্য সরকার। ১৯৬৭ সালে গ্রন্থাগারটি খুলে দেওয়া হয় সর্বসাধারণের জন্য। সেখানে বাংলাসহ ১৪টি ভাষায় রামায়ণের অনুবাদ রয়েছে। অথচ কর্মীর অভাবে দীর্ঘদিন কার্যত বন্ধ গ্রন্থাগার। নেই কোনও গ্রন্থাগারিক বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। ২ জন অস্থায়ী কর্মী গ্রন্থাগারটি দেখভাল করেন। সপ্তাহের কয়েকটি দিন গ্রন্থাগার খোলেন তাঁরা। তবে স্থানীয়দের দাবি, শুনেছি লাইব্রেরি খোলে, তবে কোনও দিন খোলা দেখিনি।
সম্প্রতি নদিয়ার রানাঘাটের একটি স্কুলের ছাত্রীদের নিয়ে গ্রন্থাগারে শিক্ষামূলক ভ্রমণে গিয়েছিলেন দিদিমণিরা। কিন্তু ৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও গ্রন্থাগার খোলাতে পারেননি তাঁরা। যার ফলে ৬০ জন ছাত্রীকে নিয়ে ফিরে যেতে হয় তাঁদের। এক শিক্ষিকা বলেন, ‘গ্রন্থাগার যে খোলা হয় না তা জানা ছিল না। তাই ছাত্রীদের নিরাশ হয়েই ফিরতে হচ্ছে। শিক্ষামূলক ভ্রমণের উদ্দেশ সফল হল না।’
এক ছাত্রী বলেন, ‘গ্রন্থাগারটি থেকে নতুন কিছু শেখার ইচ্ছা ছিল। পুরনো পান্ডুলিপি হাতে নিয়ে দেখার ইচ্ছা ছিল। সেসব কিছুই হল না। পরে হয়তো কোনও দিন আসা হবে না।’
স্থানীয়দের প্রশ্ন, রাজ্য সরকার ভাষা দিবস উজ্জাপনে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। অথচ কৃত্তিবাস ওঝার স্মৃতিতে তৈরি গ্রন্থাগারে স্থায়ী কর্মী নিয়োগের উদ্যোগ নেই তাদের। তাহলে কি ভাষা দিবস পালনের উদ্দেশ কি শুধুমাত্র সরকারের প্রচার?