কেউ কলেজ পড়ুয়া, কারোর আবার দর্জির দোকান আছে, কেউ বা আবার শ্রমিকের কাজ করত। প্রত্যেকেরই একটা মিল ছিল, কেউ বেশি মেলামেশা করত না। পরিচিতদের কখনও মনে হয়নি, তারা কোনও জঙ্গি কার্যকলাপে যুক্ত আছে। সেই ভুলটা ভাঙল শনিবার সকালে।
শনিবার সকালে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও কেরালার এর্নাকুলামের একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে ওই আল কায়দা জঙ্গিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। মুর্শিদাবাদেই জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (এনআইএ) জালে ধরা পড়েছে ছ'জন।
প্রথমে জলঙ্গির ঘোষপাড়া থেকে কলেজ পড়ুয়া আতিতুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। সে জলঙ্গির বাসিন্দা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এর্নাকুলামে ধৃত মোশারাফ হোসেনের ভাই সে। আতিতুরের মতো নাজমুস সাকিবও কলেজ পড়ুয়া। তার বাড়ি ডোমকলে। আতিতুর ও নাজিমুল দু'জনেই প্রথম বর্ষের পড়ুয়া। সেই ডোমকল থেকেই জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার জালে ধরা পড়েছে লিউ ইয়েন আহমেদ। অস্ত্র বর্ম পরিহিত আহমেদের একটি ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে। সে ডোমকলের বেসরকারি কলেজে ইলেক্ট্রিশিয়ানের কাজ করত। সেজন্য নামডাকও ছিল। গ্রেফতারির পর তার বাড়ির সামনে বসেছিলেন শুধু আহমেদের মা। তিনি বলেন, ‘ও হয়তো জড়িত আছে। মুসলিম সমিতির আলোচনায় যেত।’
তবে রানিনগরের আবু সুফিয়ানের গ্রেফতারিতে সবথেকে বেশি অবাক হয়েছেন স্থানীয়রা। তাঁরা জানান, আবুর পরিবার উচ্চশিক্ষিত। তার বাবা শিক্ষক। দুই ভাইও শিক্ষক। আবুর দর্জির দোকান ছিল। তবে এলাকায় কারোর সঙ্গে বেশি মেলামেশা করত না। চুপচাপ থাকত। এলাকায় গোঁড়া হিসেবে পরিচিত সে। এতটাই গোঁড়ামি ছিল যে সন্তান হওয়ার সময় চিকিৎসকেরও কাছে যায়নি বলে দাবি স্থানীয়দের। সেই আবুই যে পাকিস্তানের আল কায়দার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছিল, তা মেনে নিতে পারছে না পরিবার।
আরও পড়ুন : বাংলা ও কেরালায় ফাঁস আল কায়দা মডিউল, NIA-এর জালে ৯ জঙ্গি
একই অবস্থা অপর ধৃত আল মামুন কামালের বাড়িতেও। তাঁর স্ত্রী জানান, কেরালায় আগে শ্রমিকের কাজ করত মামুন। বছরদুয়েক আগে বাড়ি ফিরে এসে দিনমজুরির কাজ শুরু করে। তারপর শনিবার সকালে কেউ ডাকতে থাকে। মামুনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু কেন ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তা জানানো হয়নি। মামুনও কিছু বলেনি। স্ত্রী'র কথায়, ‘স্বামী শুধু জানিয়েছে, দোষ করলে শাস্তি মিলবে। দোষ না করলে শাস্তি মিলবে না।’
এনআইএ স্পষ্ট জানিয়েছেে, অস্ত্র সরবরাহের জন্য মুর্শিদাবাদ ও এনার্কুলামে ধৃত জঙ্গিদের মধ্যে চারজনের কাশ্মীরে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। পাকিস্তানি হ্যান্ডেলারদের নির্দেশেই তারা সেই কাজ করছিল।
প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, সোশ্যাল মিডিয়ায় ধৃতদের মগজধোলাই করেছিল পাকিস্তানের আল-কায়দা জঙ্গিরা। রাজধানী-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হামলা চালানোর জন্য তাদের ‘উদ্বুদ্ধ’ করা হয়েছিল। ওই মডিউলের সদস্যরা টাকা তুলছিল এবং অস্ত্র ও গোলা-বারুদের জন্য কয়েকজন জঙ্গি নয়াদিল্লি যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল। এই গ্রেফতারির ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সম্ভাব্য জঙ্গি হামলার ছক রুখে দেওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছে এনআইএ।