মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বারবার করে ন্যায় যাত্রায় যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল। তবে তিনি কংগ্রেসের কর্মসূচিতে যোগ দেবেন না বলেই জানা গিয়েছে। এমনকী এর আগে তাঁকে জনসমক্ষে এই যাত্রা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করতেও শোনা গিয়েছিল। মমতা দাবি করেছিলেন, রাহুল গান্ধী নাকি তাঁকে যাত্রার বিষয়ে আগে থেকে কিছু জানাননি। এই 'সৌজন্যতার অভাবে' মমতা যে ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন, তা তিনি লুকিয়ে রাখেননি। এহেন অবস্থায় উত্তরবঙ্গে রাহুলের জনসভার অনুমতি দেওয়া হয়নি। রাহুল গান্ধীর যাত্রার বাসও আটকানোর অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। আর এই সবের মাঝেই বাংলায় ফের দেখা গেল বাম-কংগ্রেস রসায়ন।
বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোট গঠন হওয়ার পর থেকেই বাংলায় কংগ্রেসকে নিয়ে কৌতুহল ছিল। বিগত বছরগুলির মতো কি অধীররা বামেদেরই হাত ধরবেন, নাকি এবারে ফের মমতার সঙ্গে জোট বাঁধবেন তাঁরা। মমতার সঙ্গে এই মর্মে জোট চর্চা শুরুও হয়ে গিয়েছিল। মহম্মদ সেলিম 'এক লড়ার' প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছিলেন। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধতে আগ্রহী নন। আর তাই ফের 'পুরনো বন্ধু' বামেদের কাছেই ফিরছে কংগ্রেস। অন্তত ন্যায় যাত্রায় এমনই ইঙ্গিত মিলেছে। আর তাই মমতার অনুপস্থিতিতে রাহুলের যাত্রায় যোগ দিয়েছে সিপিএম। আর রাহুলের যাত্রায় বিশেষ ভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বাম যুব সংগঠনের 'মুখ' মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। বিগত কয়েক বছরে মীনাক্ষীকে 'ক্যাপ্টেন' সম্বোধন করে সামনের সারিতে নিয়ে এসেছেন বামেদের প্রবীণ নেতারা। নন্দীগ্রামে মমতা, শুভেন্দুর বিরুদ্ধে ২১ সালে প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। এহেন মীনাক্ষীকে রাহুলের যাত্রায় বিশেষ আমন্ত্রণ জানানোর আলাদা তাৎপর্য আছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ন্যায় যাত্রা অসম থেকে বাংলায় প্রবেশের পর দু'দিনের বিরতিতে দিল্লি গিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। ফের বাগডোগরায় এসে যাত্রার সূচনা করলেন রাহুল। এরই মধ্যে মমতর সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয় কংগ্রেসের। জয়রাম রমেশের মতো বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতারা মমতার প্রশংসা করলেও দুই দলের মধ্যে 'ফাটল' যেন আরও চওড়া হচ্ছে দিনকে দিন। তবে রাহুল নিজের জনসংযোগ যাত্রা পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। এই আবহে রবিবার শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডে ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায় যোগ দেন বামেরা। রাহুলের মিছিলে অংশ নেন সিপিএম, সিপিআই সমর্থকরা। জানা গিয়েছে এরপরেও রাহুলের যাত্রায় দেখা যাবে বামেদের।
রিপোর্ট অনুযায়ী, রাহুলের যাত্রা মালদায় প্রবেশ করলে সেখানে যোগ দেবেন সুজন চক্রবর্তী, শতরূপ ঘোষ। এরপরে মুর্শিদবাদে রাহুলের যাত্রায় থাকবেন সিপিএম-এর রাজ্য সমপাদক মহম্মদ সেলিম নিজে। অধীরের জেলায় কংগ্রেসের যাত্রায় বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে মীনাক্ষীকেও। এদিকে গতকাল বাংলার গুরুত্ব বোঝাতে রাহুল বলেন, 'বাংলা একটা বিশেষ জায়গা। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যে আদর্শগত লড়াই হয়েছিল, তার সূচনা এই বাংলা থেকেই। দেশকে রাস্তা দেখানো বাংলার কর্তব্য়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুভাষচন্দ্র বসু থেকে বিবেকানন্দরা সেটাই করেছিলেন। বাঙালিদের মধ্য়ে সেই ক্ষমতা আছে। আপনারা যদি দেশকে রাস্তা না দেখান, তাহলে দেশ আপনাকে ক্ষমা করবে না।'