রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক রেল প্রকল্প বাংলায় নিয়ে আসেন। তার মধ্যে তারকেশ্বর–বিষ্ণুপুর রেল প্রকল্পও ছিল। পর্যটন এবং তীর্থক্ষেত্রের মেলবন্ধন করতে চেয়েছিলেন তিনি। তাই তারকেশ্বরের সঙ্গে বিষ্ণুপুরকে জুড়তে চান তৎকালীন রেলমন্ত্রী। কিন্তু জমিজটের জেরে এই কাজ বহুদিন থমকে থাকে। এখন তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তাই জমির জট কাটিয়ে দিয়েছেন। ৮২.৮৭ কিমি এই বিস্তৃত রেলপথের কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই মাঝের একটা অংশ বাদ দিলে বাকি দু’দিক দিয়ে ট্রেন চলাচল করতে শুরু করেছে।
বিষয়টি ঠিক কী ঘটেছে? এই প্রকল্পের মধ্যে এখন যে পর্যন্ত কাজ হয়েছে তাতে ট্রেন চলছে তারকেশ্বর থেকে গোঘাট পর্যন্ত। আবার ঠিক বিপরীত দিকে ট্রেন চলছে বিষ্ণুপুর থেকে ময়নাপুর পর্যন্ত। কিন্তু মাঝের অংশ ময়নাপুর থেকে গোঘাট পর্যন্ত রেলপথের কাজ এখনও শেষ হয়নি। তাই গোটা প্রকল্পটি জোড়েনি। এই না জোড়া অংশের কারণই হল জমিজট। যাকে ভবাদিঘির জট বলা হচ্ছে। এই জমিজট এবার ধীরগতিতে কাটানো হচ্ছে। সেটা সম্পূর্ণ হলেই জুড়ে যাবে গোটা প্রকল্প। অসমাপ্ত রয়ে গিয়েছে পশ্চিম অমরপুর মৌজা। স্থানীয় কৃষকরা এখানের জমি দিতে চাইছেন না। আপত্তি তৈরি হয়েছে জমির দর নিয়ে।
তারপর ঠিক কী ঘটেছে? বারবার বৈঠক করে শেষে সেই দর নিয়ে মীমাংশা হয়েছে। আর জমিজটও কেটে গিয়েছে বলে রেল সূত্রে খবর। তবে এই কাজটি করতে সাহায্য করেছে রাজ্যের ভূমি দফতর। জট কাটাতে তারা উদ্যোগ নেয়। শেষে দু’পক্ষের মধ্যে রফা হয় কাঠা পিছু ৯২ হাজার টাকা দামে। তারকেশ্বর–বিষ্ণুপুর রেল প্রকল্পের মধ্যে হুগলির তারকেশ্বর থেকে আরামবাগ হয়ে গোঘাট পর্যন্ত ৩৩.৯৪ কিমি কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। তাই এই পথে ট্রেন চলাচাল করছে। আবার বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর থেকে ময়নাপুর পর্যন্ত ২২.৪৮ কিমির কাজও শেষ হয়েছে। সেই পথেও ট্রেন চলছে। গোঘাট থেকে ভবাদিঘির ৯৫০ মিটার বাদ দিয়ে কামারপুকুর পর্যন্ত ৫.৫০ কিমি রেল পথের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাস চালকের হার্ট অ্যাটাকে থমকাল যাত্রা, বাংলা থেকে বালেশ্বরের পথে বিপদে যাত্রীরা
আর কী জানা যাচ্ছে? হুগলি জেলার মধ্যে বাকি রয়েছে কামারপুকুর থেকে বাঁকুড়ার জয়রামবাটী পর্যন্ত ৩.৩০ কিমি। তার মধ্যে ০.৭৫৫ কিমি জমি রেলকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি ২.৫৪৫ কিমির জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তবে ন্যায্য দাম না মেলায় ক্ষতিপূরণের চেক নেননি পশ্চিম অমরপুরের কৃষকরা। ২০১০ সাল থেকে জমির ন্যায্য মূল্য এবং নিকাশি ব্যবস্থার দাবিতে আন্দোলন চলছে। ২০১০ সালের শুনানিতে জমির দাম ধার্য হয় মাত্র কাঠা পিছু ১৪ হাজার ৬৫০ টাকা। আর তাতেই রাজি হননি কৃষকরা। তাঁরা কাঠা পিছু অন্তত ৭৫ হাজার টাকা দাম দিতে দাবি জানান। অবশেষে রাজ্য ভূমি দফতরের মধ্যস্থতায় এখন ঠিক হয়েছে কাঠা পিছু জমির দর দেওয়া হবে ৯২ হাজার টাকা। এতে রাজি হন কৃষকরা। পশ্চিম অমরপুরে জমি দাম নিয়ে সমস্যা মিটতেই রাজ্যের ভূমি দফতর বৃহস্পতিবার থেকে কৃষকদের শুনানির নোটিশ পাঠানো শুরু করেছে।