কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেওয়া সত্ত্বেও বাংলার একাধিক জায়গায় অবাধে ঘুরে বেড়ালেন দিল্লি ফেরত Covid-19 আক্রান্ত যুবতী ও তাঁর ৩৪ সঙ্গী। তাঁদের থেকে ঠিক কত জনের মধ্যে জীবাণু ছড়িয়েছে, সেই হিসেব পেতে ঘাম ছুটেছে রাজ্য প্রশাসনের।
জানা গিয়েছে, সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে ব্রিটেন থেকে ফেরা এক আত্মীয়ের সঙ্গে আদতে উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দা ওই যুবতীর সাক্ষাৎ হয়েছিল। নয়াদিল্লিতে তাঁর নমুনায় Covid-19 সংক্রমণ ধরা পড়ার পরে কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু তা অমান্য করে ৯ মাসের কন্যাসন্তান ও ৬ বছরের পুত্রসন্তানকে নিয়ে দুই বার ট্রেন পালটে তিনি নদিয়ার তেহট্টে এক আত্মীয়ার বাড়িতে পৌঁছান।
বছর পঁয়তাল্লিশের ওই আত্মীয়া আসলে দিল্লিরই বাসিন্দা। তাঁর ১১ বছর বয়েসি ছেলেকে নিয়ে একই ট্রেনে যুবতীর সঙ্গে তিনি নদিয়ার বাড়িতে ফেরেন।
জানা গিয়েছে, তেহট্টে এসে বাজারে অবাধে ঘোরাঘুরি করেন এই চার জন। শিশুকন্যাকে কোলে নিয়ে আদর করেন এলাকার অনেকে। এমনকি দুই মহিলা তাঁদের সন্তানদের নিয়ে সম্প্রতি এক বিয়েবাড়িতেও নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়েছিলেন।
সাম্প্রতিক পরীক্ষায় দিল্লি ফেরত এই পাঁচ জনের নমুনায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের হদিশ মিলেছে। তাঁদের হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের তরফে তাঁদের সংস্পর্শে আসা সবাইকে বিস্তারিত তথ্য জানানোর জন্য আবেদন করা হচ্ছে। কিন্তু তাঁদের অনেকেই তাতে সাড়া দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ প্রশাসনের। এই কারণে গ্রাম বাংলায় অচিরে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন প্রশাসনিকস কর্তারা।
এক শীর্ষস্থানীয় প্রশাসনিক আধিকারিকের দাবি, ‘ওই পরিবারের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরা সকলেই স্বীকার করছেন না। এর ফলে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।’
নদিয়া জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন, গত ১৬ মার্চ বিলেত ফেরত আত্মীয়ের সঙ্গে নয়াদিল্লিতে দেখা হয়েছিল বছর উনত্রিশের যুবতীর। এরপর তাঁকে বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু গত ১৯ মার্চ তিনি দিল্লি-শেয়ালদা রাজধানী এক্সপ্রেসে সওয়ারি হয়ে শেয়ালদা জনশনে এসে নামেন। সেখান থেকে লোকাল ট্রেন ধরে তিনি ২০ মার্চ তেহট্টে পৌঁছান। তাঁর সঙ্গে দুই সন্তান, বথর পঁয়তাল্লিশের এক আত্মীয়া ও তাঁর ১১ বছর বয়েসি ছেলেও ছিল। গত ২৭ মার্চ এই ৫ জনের নমুনাতেই করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রমাণ মিলেছে। অন্য দিকে, গত ২০ মার্চ তাঁদের লন্ডন ফেরত আত্মীয়ের দেহেও সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া যায়।
রাজ্য প্রশাসনের তরফে ইতিমধ্যে এই পাঁচ জনের তেহট্টবাসী আত্মীয়-স্বজনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের নিজের বাড়িতে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।
অন্য দিকে, করোনা আক্রান্ত যুবতীর কথা অগ্রিম না জানানোর জন্য দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা দফতরের অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী। শনিবার তিনি বলেন, ‘দিল্লির আমাদের জানানো উচিত ছিল। যে মহিলাকে আইসোলেশনে থাকতে বলা হয়েছিল, তাঁর সম্পর্কে দিল্লি প্রশাসনের কাছে নিশ্চয়ই সমস্ত তথ্য ছিল। কী করে তাঁদের অজান্তে ওই মহিলা এখানে এলেন?’