রহস্যজনক অবস্থায় বাড়ি থেকে উদ্ধার হল সদ্যজাত শিশু—সহ দম্পতির মৃতদেহ। রক্তাক্ত অবস্থায় তিনজনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিথর ছোট্ট শিশুকে নিয়ে খাটের ওপর উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছেন বছর তেইশের মহিলা। মেঝেতে পড়ে স্বামীর দেহ। ঘটনা ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মুর্শিদাবাদের সুতিতে। সোমবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে সুতির নূরপুর গ্রামে।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম শ্রীমন্ত সিংহ (২৮), ববিতা দাস (২৩) ও শ্রীমতি সিংহ (১)।পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নুরপুরের ঘোষপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শ্রীমন্ত সিংহ ও ববিতা দাসের বেশ কয়েক বছর আগে বিয়ে হয়। মাস খানেক আগে এক সন্তানের জন্ম দেন ববিতা। ঘটনায় মাত্র ২৮ দিনের শিশুরও মৃত্যু হয়েছে।
ঘটনায় স্তম্ভিত গোটা এলাকা। স্ত্রী, সন্তানকে খুন করে স্বামী আত্মঘাতী হয়েছেন, না কি তাঁদের ৩ জনকেই কেউ পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে, এই নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। তবে শ্বশুরবাড়ির লোকেদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তুলেছেন নিহত গৃহবধূর বাপের বাড়ির লোকেরা। আবার গৃহকর্তার মানসিক সমস্যার কথা শোনা গিয়েছে তাঁরই বোনের কাছে। ফলে, ঘটনাটি ঠিক কী, তা নিয়ে রহস্যের দানা বেঁধেছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় সুতি থানার পুলিশ। তারপর দেহগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠায় তারা। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত সুখী পরিবার ছিলেন ওঁরা। সন্তান হওয়ার পর সুখ বেড়েছিল কয়েক গুণ। তবে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অহরহ অশান্তি লেগেই থাকত।
সোমবার সকালে শ্রীমন্তর বাড়িতে চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পেরেছিলেন প্রতিবেশীরা। কিন্তু দুপুরের পর থেকে তাঁদের কোনও সাড়া শব্দ পাচ্ছিলেন না—কেউই। সন্ধ্যায় শ্রীমন্ত ও তাঁর স্ত্রী ববিতাকে বারবার ডাকেন প্রতিবেশীরা। তবে কারোর সাড়া পাননি। বিপদ আঁচ করেই থানায় খবর দেন তাঁরা। পুলিশ গিয়ে ঘরের ভিতর থেকে তিন জনের নিথর দেহ উদ্ধার করে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, গৃহবধূর গলায় ফাঁসের চিহ্ন রয়েছে। সদ্যজাত শিশুকেও কোনও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। আর এখানেই সন্দেহ গাঢ় হয়েছে তদন্তকারীদের। গৃহকর্তাই কি তাহলে স্ত্রী, সন্তানকে খুন করে আত্মঘাতী হলেন?
এই হত্যাকাণ্ড ঘিরে সংশয় তৈরি হয়েছে পরিবারের সদস্যদের মধ্যেই। মৃত ব্যক্তির বোনের বক্তব্য, তাঁর দাদার সামান্য মানসিক সমস্যা ছিল। তা নিয়ে দাদা-বউদির মধ্যে অশান্তি লেগেই থাকত। সেই মানসিক সমস্যা থেকেই কি এমন ঘটনা তিনি ঘটালেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আবার গৃহবধূর বাপের বাড়ির লোকেদের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকে মেয়ের স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁর উপর অত্যাচার চালাত। তাঁরাই পরিকল্পনা করে সদ্যজাত শিশু-সহ গোটা পরিবারকে খুন করেছে। ‘খুনি’ দের কড়া শাস্তির দাবি তুলেছেন গৃহবধূর মা। কারণ যাই হোক না কেন, একই পরিবারের তিনজনের এই মৃত্যু নিয়ে রহস্যের দানা বেঁধেছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও, এখনও তেমন কোনও সূত্র তদন্তকারীরা পাননি বলেই জানা গিয়েছে।