এশিয়ার গভীরতম খনিতে কাজ করতে গিয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটল। যন্ত্রাংশ মেরামত করার সময় ২,২০০ ফুট নিচে পড়ে গেলেন শ্রমিক। ঘটনায় মোট দুই ঠিকা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে আসানসোলে ইসিএলের সোদপুরের চিনাকুড়ি কোলিয়ারি ১/২ নম্বর খনিতে। মৃতদের নাম আকাশ বাউড়ি ও অনিল যাদব। এই ঘটনায় ইসিএলের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আদিবাসী শ্রমিকের মৃত্যুতে ২০ ঘণ্টা দেহ রেখে বিক্ষোভ
জানা গিয়েছে, দীর্ঘ ১১ বছর পর এই কয়লা খনি থেকে বেসরকারি উদ্যোগে কয়লা তোলার কাজ শুরু হতে চলেছে। সেই উদ্দেশ্যে এদিন দু'নম্বর পিটের পুরনো হেড গিয়ার মেরামত করা হচ্ছিল। এর মাধ্যমে ডুলি খনি থেকে ওঠানামা করে। সেখানে কাজ করছিলেন ৫ জন শ্রমিক। সেই সময় গিয়ারের লোহার চাদর বদলাতে গিয়ে ঘটে বিপত্তি। আচমকা লোহার দড়ি ছিঁড়ে যায়। এরপরে আকাশ এবং অনিল নিচে পড়ে যান। তবে আকাশ ১৫-২০ ফুট নিচে ডুলিতে আটকে পড়েন। তাঁকে তড়িঘড়ি উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। অন্যদিকে, ২,২০০ ফুট গভীরে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় অনিলের।
প্রসঙ্গত, নিরাপত্তাজনিত কারণে ২০১৩ সালের পর এই খনিতে কয়লা উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর সম্প্রতি একটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হয় ইসিএলের । তাতে ১৬ মিলিয়ন টন কয়লা তোলার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ওই সংস্থার কয়লা থেকে যা আয় হবে তার ৮ শতাংশ ইসিএলকে দেবে ওই সংস্থা। কয়েকদিনের মধ্যে সেই কাজ শুরু হওয়ার কথা। তার জন্যই একটি বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে যন্ত্রগুলি মেরামত করা হচ্ছিল আর সেই সময় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ইসিএলের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পাশাপাশি পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য আলাদাভাবে তদন্ত শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, এই ঘটনার পরে এলাকার বাসিন্দা এবং কর্মীরা সেখানে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। তারা কয়লা খনির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাদের বক্তব্য, ইসিএল নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। অভিযোগ, সেখানে কাজ করার সময় সুপারভাইজার বা কোনও অফিসার ছিলেন না।
এদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছন কুলটির বিজেপি বিধায়ক অজয় পোদ্দার। তিনি অভিযোগ তোলেন ডিরেক্টরস অফ মাইন্স সেফটির নির্দেশ মানা হয়নি। সে ক্ষেত্রে যে বেসরকারি সংস্থা কাজ করছিল তাদের গাফিলতি রয়েছে বলে দাবি করেছেন বিজেপি বিধায়ক।
তবে এদিনের ঘটনায় পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে। মৃতদের পরিবারের সদস্যরা ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে।