হাবড়ায় এসে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দুপুরে সরাসরি বিজেপিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। হাবড়ায় তৃণমূল সুপ্রিমোর সভা খুবই উল্লেখযোগ্য। কারণ গতকাল সিএএ কার্যকর করা হয়েছে দেশজুড়ে। আর মুখ্যমন্ত্রী বরাবরই এটার বিরোধিতা করে এসেছেন। হাবড়ার বাণীপুরের এই সভা থেকে একগুচ্ছ সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করার পরই সিএএ ইস্যুতে লাগাতার কেন্দ্রকে আক্রমণ শানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সিএএ কী ভাবে রূপায়ণ হবে সেটা নিয়ে পরিষ্কার কিছু জানানো হয়নি আইনে। তফসিলি, আদিবাসী, মতুয়াদের সংরক্ষণ নিয়ে কী হবে, তাও পরিষ্কার করা নেই। আজ, মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিজেপি দেশজুড়ে অশান্তির খেলা শুরু করেছে। সিএএ বাংলাকে আবার ভাগ করার খেলা। মুসলিম, নমঃশূদ্র, বাঙালিদের তাড়ানোর খেলা এটা। আমরা এটা করতে দিচ্ছি না। দেব না। আমরা সবাই নাগরিক। সিএএ করলে যাঁরা নাগরিক, তাঁরা অনুপ্রবেশকারী হয়ে যাবে। বিজেপি ভবিষ্যতে যে অশান্তির খেলা খেলার চেষ্টা করবে, সেটা আমি যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করব। তার জন্য আমাকে সময় দিতে হবে। নির্বাচনের আগে প্রতারণা, ছলনা, বঞ্চনা, নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত করছে বিজেপি। এই সিএএ আদৌ বৈধ কি না সন্দেহ আছে। পুরোপুরি ভাঁওতা। ২০১৯ সালে অসমে ১৩ লক্ষ বাঙালি হিন্দুকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। অনেকে আত্মহত্যা করেন।’
আরও পড়ুন: ছবি সরল মমতা–অভিষেকের, অর্জুন বনাম পার্থ লড়াই হচ্ছে? বিদ্রোহে ব্যারাকপুরের সাংসদ
অন্যদিকে সোমবার দেশজুড়ে কার্যকর হয়েছে সিএএ। লোকসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ভাঁওতা বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার হাবড়ার সভা থেকে সুর সপ্তমে চড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘বিজেপির নেতারা বলছেন সিএএ করে দিলাম। যাঁদের দরখাস্ত করতে বলা হচ্ছে তারা একবার দরখাস্ত করলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা নাগরিক থাকা সত্ত্বেও বেআইনি অনুপ্রবেশকারী হয়ে যাবেন। সবকিছুই বেআইনি ঘোষণা করে দেবে কেন্দ্রের সরকার। এটা অধিকার কাড়ার খেলা। ভোটের আগে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। বেআইনি অনুপ্রবেশকারী হয়ে গেলে আপনাদের সম্পত্তি, চাকরি, বাড়ি কী হবে? লুডো খেলা জানেন তো? ছক্কা মারে ঘর খোলে। এটা বিজেপির লুডো খেলার ছক্কা। ওরা ভাবছে এটা করলে ছক্কা পাবে। কিন্তু নিট রেজাল্ট শূন্য। এই দরখাস্ত করার আগে বারবার ভাববেন। একবার নয় হাজারবার ভাবুন।’
এছাড়া সিএএ’র সঙ্গে এনআরসি’র যোগ আছে বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই তাঁর হুঙ্কার, ‘যদি ক্যা দেখিয়ে এনআরসি নিয়ে এসে কারও নাগরিকত্ব বাতিল করা হয় তাহলে আমরা কঠোর প্রতিবাদ করব। কাউকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রেখে দেবে, এই চালাকি আমরা মানব না। আমি জীবন দেব, বাংলায় ডিটেনশান ক্যাম্প করতে দেব না। বাংলা থেকে কাউকে বঞ্চিত করতে দেব না। কোনও ক্ল্যারিটি নেই। আপনারা খুশি হলে আমি খুশি। দুঃখি হলে আমি দুঃখি। আবেদন করলেই বিদেশি। গতকাল থেকে রমজান মাস শুরু হয়েছে। তাই ওই দিনটা ঠিক করা হয়েছে। ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব কখনও শুনেছেন! ইউনাইটেট নেশনে বলা হয়েছে, অনুপ্রবেশকারীরা যেন বৈধ কারণ ছাড়া রাষ্ট্রহীন না হয়ে পড়ে। এটার কোনও যৌক্তিকতা নেই। আইন বিশেষজ্ঞরাও আমাদের একই কথা বলেছেন।’