খুলে যাচ্ছে রুজি–রুটির জায়গা। বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিল। কবে খুলবে? এই প্র্রশ্ন নিয়েই তৈরি হয়েছিল ধোঁয়াশা। অবশেষে সেই ধোঁয়াশার পালা শেষ হয়েছে। টানা তিন বছর বন্ধ থাকার পরে ২০২৪ সালের ৫ মার্চ খুলতে চলেছে রিষড়ার ওয়েলিংটন জুট মিল। সুতরাং শ্রমিকরা এখানে আবার কাজ পাবেন। রুজি–রোজগার বাড়বে। উৎপাদন শুরু হলেই সব শ্রমিক কাজ পাবেন। এই মিল খোলার খবর এখন প্রকাশ্যে চলে এসেছে। আর তাতেই গঙ্গাপারের শ্রমিকদের মধ্যে খুশির হাওয়া বইতে শুরু করেছে। কারণ এই তিনটে বছর খুব কষ্টে কাটাতে হয়েছে তাঁদের। তাই উৎপাদনের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে তৈরি শ্রমিকরা।
এদিকে অতীত স্মৃতি তাঁদের চোখে জল এনে দিয়েছিল কদিন আগেও। কারণ হঠাৎই আর্থিক সংকটের কারণ দেখিয়ে ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’ ঘোষণা করেন জুটমিল কর্তৃপক্ষ। তখনই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়। রোজগার পুরোপুরি মুখ থুবড়ে পড়ে। অথচ সংসার আছে প্রত্যেকেরই। তা কেমন করে চলবে, এই ভাবনা তাঁদের চোখে জল এনে দিয়েছিল। এবার সেই চোখের জল মুছে নতুন উদ্যমে কাজে নামতে চাইছেন চটকল শ্রমিকরা। অবশেষে খুলে যাচ্ছে রিষড়ার ওয়েলিংটন জুট মিল। ইতিবাচক মানসিকতা দেখাতে শুরু করেছেন কর্তৃপক্ষ। মিল ফুলসুইংয়ে চলুক সেটাই চাইছে সবাই।
আরও পড়ুন: মার্চ মাসেই পূর্ব মেদিনীপুর সফরে আসছেন মু্খ্যমন্ত্রী, জগন্নাথ ধামের কাজে বাড়ল গতি
অন্যদিকে সামনে লোকসভা নির্বাচন। এই আবহে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে জুটমিল খুলে গেলে তার প্রভাব পড়বে ভোটে। কারণ এই ঐকান্তিক চেষ্টা আর কেউ করেননি। আর বুধবার দিন শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের উপস্থিতিতে কলকাতায় ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে জুটমিল খোলার সিদ্ধান্ত হয়। রাজ্যের অতিরিক্ত শ্রম কমিশনার তীর্থঙ্কর রায়, শ্রীরামপুরের যুগ্ম শ্রম কমিশনার, মিলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নির্মল পুজারা, ডিরেক্টর হর্ষবর্ধ ওয়াধয়াও উপস্থিত ছিলেন। প্রেসিডেন্ট (ওয়ার্কস) অর্ঘ্য চট্টোপাধ্যায়, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুব্রতকুমার আদক–সহ নানা শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা হাজির ছিলেন।
এছাড়া এখন রিষড়ার ওয়েলিংটন জুট মিলের মাস্টার রোলে ১৬৮৬ জন শ্রমিক আছেন। প্রেসিডেন্ট (ওয়ার্কস) অর্ঘ্য চট্টোপাধ্যায় জানান, শুরুতে ৩০ টন উৎপাদন হবে। পর্যায়ক্রমে তা বাড়িয়ে পূর্ণমাত্রায় অর্থাৎ ১০০ টনে পৌঁছনো লক্ষ্য। জুটমিল খোলার খবর শুনে অনেক শ্রমিকই বন্ধ গেটের সামনে ঘুরে যান। বহু শ্রমিক এই প্রসঙ্গে একসঙ্গে বলেন, ‘চটকল বন্ধ থাকা অবস্থাতেই করোনাভাইরাস পরিস্থিতি কাটাতে হয়েছে। আর আর্থিক অনটনের মধ্যেই সংসার চলেছে কখনও একবেলা খেয়ে। আবার কোনওদিন কিছু জোটইনি। একটা সময় এমন হয়েছিল হতাশা নেমে এসেছিল জীবনে। প্রতিবেশী মানুষজন কিছু সাহায্য করত। তাই দিয়ে সংসার চলত। এবার সেটা মিটবে।’