লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে চরম ‘অস্বস্তি’র মুখে পড়ল বঙ্গ–বিজেপি। আর তার পরই ‘কড়া’ অবস্থান নিতে বাধ্য হল রাজ্য বিজেপি। এবার থেকে জেলা সভাপতির অনুমোদন ছাড়া দলে কাউকেই যোগদান করানো যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উত্তর কলকাতার বুকে এমন ঘটনা ঘটায় এখন মুখ দেখানো কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ উত্তর কলকাতা সাংগঠনিক জেলার অন্তর্গত বেলেঘাটায় কিছু তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের গত ৩ মার্চ বিজেপিতে যোগদান করানো হয়। বিজেপির মণ্ডল নেতৃত্ব তা করেছিল। তার জেরে দলের অন্দরে ও বাইরে চরম অস্বস্তিতে পড়তে হয়। বেলেঘাটার বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকার বিধানসভা নির্বাচনের পর ‘সন্ত্রাসে’র বলি হন বলে দলের অভিযোগ।
তখন তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার–সহ বঙ্গ–বিজেপির নেতারা। তাঁদের সহায়তায় আইনি লড়াই শুরু করেন প্রয়াত অভিজিতের দাদা বিশ্বজিৎ সরকার। তাঁর অভিযোগ, বেলেঘাটা এলাকার যে তৃণমূল কর্মীদের দলে নেওয়া হয়েছে তাঁরা, ভাইয়ের খুনে অভিযুক্ত। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ করে দল ছাড়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি। এই ঘটনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হন তথাগত রায়, স্বপন দাশগুপ্তের মতো বিজেপির বর্ষীয়ান নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে হাট করে দরজা খোলা হয়েছিল। আবার সেটা ঘটলে দলকে ফল ভুগতে হবে। বাধ্য হয়ে তখন আসরে নামেন দলের শীর্ষ নেতারা।
আরও পড়ুন: ‘বিজেপির মতো ভয়ানক, কুৎসিত দল দেখিনি’, ইডি–কে নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য মমতার
এদিকে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে। বিজেপির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়। বাধ্য হয়েরাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক তথা বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল জেলা সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষকে সঙ্গে নিয়ে রবিবার অভিজিতের বাড়িতে যান। সূত্রের খবর, পরিবারের সদস্যদের কাছে ভুল স্বীকার করেন তাঁরা। আর প্রতিশ্রুতি দেন, স্থানীয় নেতৃত্বের তথ্য শীর্ষ নেতৃত্বকে না জানানোয় এমন ঘটনা ঘটেছে। তাঁরা ‘ভুল’ শুধরে নেবেন। অভিযুক্তদের দলে যুক্ত করা হবে না। এই কথা দেওয়ার পর নির্দেশ জারি করে বলা হয়, জেলা সভাপতির অনুমোদন ছাড়া কোনও জেলায় কোনও স্তরে কাউকে যোগদান করানো যাবে না।
এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হবে আগে কখনও ভাবেনি বিজেপি। আসলে সংগঠন অত্যন্ত দুর্বল হওয়ায় এমন ঘটনা ঘটেছে বলে সূত্রের খবর। এই বিষয়ে বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, ‘আমাদের দলে অনেক বড় নেতা থাকতে পারেন। কিন্তু যাঁরা মার খেয়ে, আক্রান্ত হয়ে, পরিবার হারিয়ে দল করছে, তাঁরাই আসলে দলের সম্পদ। তাই তাঁদের আপত্তি থাকলে অথবা এই আক্রমণের ঘটনায় কেউ জড়িত থাকলে দল বাড়ানোর যুক্তি নিয়ে কাউকে দলে যুক্ত করা হবে না। বিশ্বজিৎ এই আশ্বাস পেয়ে দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নিয়েছেন।’