আফগানিস্তান তালিবান দখলে চলে যাওয়ার পর থেকেই বিভীষিকাময় নানা ঘটনা উঠে আসছে। এমনই এক ঘটনার সঙ্গে কলকাতার যোগসূত্র মিলেছে। এখানের বাঙালি মেয়ে বিয়ে করে পাড়ি দিয়েছিলেন কাবুলিওয়ালার দেশে। কাবুলিওয়ালা স্বামীর সঙ্গেই আফগানিস্তানে শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলেন কলকাতার সঙ্ঘমিত্রা দফাদার। কিন্তু চার বছর হল সেই সংসারে ভাঙন ধরেছে। তখন ওখানে চাকরি করে সংসার চালাছিলেন ‘সিঙ্গল মাদার’ সঙ্ঘমিত্রা। কিন্তু তালিবান রাজত্বে আফগান মুলূকে এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন দুই সন্তানের মা। সুতরাং ‘সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু অনলে পুড়িয়া গেল’ অবস্থা হয়েছে তাঁর।
জানা গিয়েছে, এই বঙ্গ–কন্যার কলকাতার বাড়ি বেহালা সখেরবাজারে। সঙ্ঘমিত্রা বিয়ের পর আফগানিস্তানে গিয়ে হয়েছেন সোনিয়া খান। নিজেকে ওখানকার মতো করে বদলে নিয়েছেন তিনি। আফগানিস্তানে নার্সিং প্রশিক্ষণ নিয়ে শারানা প্রভিন্সের হাসপাতালে চাকরি করছেন। চার বছর আগে স্বামী ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তখন থেকেই শারানাতে দুই সন্তানকে মানুষ করার লড়াই চালাচ্ছিলেন। এখন সেখানে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন তিনি।
ঠিক কী ঘটেছে? ইতিমধ্যেই সঙ্ঘমিত্রাদের গ্রামের দখল নিয়েছে বন্দুকধারী তালিবানরা। চলছে গর্জন। বাড়ির বাইরে পা রাখতে সবাই ভয় পাচ্ছেন। সঙ্ঘমিত্রার জানাচ্ছেন, ‘দুই সন্তানকে নিয়ে ভয়ে রয়েছি। চাল, ডাল অন্যান্য আনাজপাতি শেষের দিকে। বোরখা পরেও বাইরে বেরোতে সাহস পাচ্ছি না।’ তালিবানদের অত্যাচারে ওখানের মহিলারা আতঙ্কের সঙ্গে দিনযাপন করছেন। মহিলা সংবাদ সঞ্চালক অফিসে ঢুকতে পারেননি। এখন একই হাল হয়েছে সঙ্ঘমিত্রার। কারণ তাঁকেও হাসপাতালে আসতে হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কী করে চলবে সংসার? সঙ্ঘমিত্রা বলেন, ‘মেয়ে বলেই হয়তো আমার চাকরিটা চলে গেল! সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে আর কত দিন চালাবো? মা বাবা কলকাতা থেকে টাকা পাঠাচ্ছেন। সেই টাকাই এখন ভরসা।’
সঙ্ঘমিত্রা তথা সোনিয়া খানের ছেলে আরবাজ খান ১৮ বছরে পা দিয়েছে। মেয়ে হিনা খানের এখন বয়স ৬। হাসপাতালের চাকরি চলে গিয়েছে। তালিবানের হাত থেকে ছেলেমেয়েকে বাঁচিয়ে রাখাটাই চ্যালেঞ্জের। কারণ ছেলেকে বাজারে পাঠিয়েছিলেন সঙ্ঘমিত্রা। সেখানে রাস্তায় তালিবান ছেলেটির হাতে বন্ধুক ধরিয়ে দেয়। ছেলে তালিবানে যোগ দিতে চাইছে কি না জিজ্ঞাসা করে। শিউরে উঠেছেন সঙ্ঘমিত্রা। এখন কোনওরকমে ভারতে ফিরতে চান। তাই তাঁর আকুতি, ‘আমি তো ওই দেশেরই মেয়ে। আমাদের কি দেশ ফিরিয়ে নেবে না!’