নিয়োগ দুর্নীতি মামলার মধ্যেই শিক্ষক পোস্টিং নিয়েও কলকাতা হাইকোর্টে ধমক খেল প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। কাউন্সেলিং ছাড়াই নিয়োগ এবং তৃণমূল কংগ্রেসের শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকদের বাড়ির দুয়ারে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন পূর্ব মেদিনীপুরের দুটি সার্কেলের সাতজন শিক্ষক। আজ, মঙ্গলবার এই মামলায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদকে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা প্রশ্ন করেন, ‘যাঁরা আপনাদের হাতে তৈলমর্দন করবে তাঁদের পছন্দমত স্কুলে পোস্টিং দেবেন, তাই তো?’
এদিকে আদালতে মামলাকারীর বক্তব্য, প্রধান শিক্ষকের প্যানেল তৈরি হওয়ার পরে কোনও কাউন্সেলিং সেখানে হয়নি। তৃণমূল কংগ্রেসের শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকদের বাড়ির কাছে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। এমনকী কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি এই কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত। মামলাকারীর আইনজীবী এই অভিযোগ তোলেন। তখনই এই মামলার শুনানি চলাকালীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদকে কার্যত তুলোধনা করলেন বিচারপতি। আর তখনই বিচারপতির প্রশ্ন, ‘যাঁরা আপনাদের হাতে তৈলমর্দন করবে তাঁদের পছন্দমত স্কুলে পোস্টিং দেবেন? মামলাকারী অনেক কিছুই চাইতে পারেন, বলতে পারেন যে তাঁকে বান্ধবীর বাড়ির কাছে পোস্টিং দেওয়া হোক। কিন্তু পোস্টিংয়ের নির্দিষ্ট বিধি কোথায়?’
অন্যদিকে হাওড়া, বাঁকুড়া, উত্তর ২৪ পরগনায় প্রধানশিক্ষকের প্যানেল তৈরি হওয়ার পর কাউন্সেলিং হলে পূর্ব মেদিনীপুরে কেন কাউন্সিলিং হয়নি? প্রশ্ন করেন বিচারপতি মান্থা। যার কোনও উত্তর দিতে পারেননি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। তখনই কড়া ভাষায় বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা বলেন, ‘বারবার জিজ্ঞাসা করা হলেও, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ বা রাজ্য কেউই নির্দিষ্ট বিধি দেখাতে পারেনি।’ এই পর পর কড়া প্রশ্নের মুখে পড়ে ব্যাকফুটে যায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। কোনওরকমে পরে নথি দেওয়ার কথা জানানো হয় আদালতকে।
আরও পড়ুন: বামফ্রন্ট সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী নারায়ণ বিশ্বাস প্রয়াত, অসুস্থ ছিলেন উত্তরবঙ্গের নেতা
তবে এরপর বিচারপতির নির্দেশ, ‘যদি এখনও কোনও শূন্যপদ থাকে তাহলে সেখানে নিয়োগ করা যাবে না। রাজ্য এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের হলফনামা জমা দিতে হবে।’ ১৮ ডিসেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। সওয়াল জবাব চলাকালীন বিচারপতি স্পষ্ট করে দেন, ২০১৬ সালের বিধি রয়েছে। তার মধ্যে কোথাও কাউন্সেলিং বা পোস্টিং করার প্রক্রিয়া নিয়ে নির্দিষ্ট কিছু বলা নেই। তাই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদগুলি পোস্টিংয়ের ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা পেয়ে যাচ্ছে। আজ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কাছে বদলি সংক্রান্ত সংসদের নীতি কী সেটা জানতে চান বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা।