একই সিদ্ধান্তে দু’মুখো বক্তব্য। আর তার জন্য কলকাতা হাইকোর্টের অসন্তোষের মুখে পড়ল স্কুল সার্ভিস কমিশন। স্কুলশিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে চাকরি বাতিল নিয়ে এমনই কাণ্ড ঘটিয়েছে এসএসসি। যা প্রকাশ্যে আসতে হইচই পড়ে যায়। নিজেদের অবস্থানে ধোঁয়াশা রাখতে গিয়েই কলকাতা হাইকোর্টের অসন্তোষের মুখে পড়ল স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। এসএসসি কিছুদিন আগে পাঁচ হাজার চাকরি বাতিল করেছিল। আর কলকাতা হাইকোর্টে এসএসসি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, অনিয়ম খুঁজে পেয়েই বরখাস্ত করা হয়েছে এই চাকরিরতদের। আর সুপ্রিম কোর্টে এসএসসি জানায়, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশেই বরখাস্ত করতে হয়েছে।
এই দু’মুখো বক্তব্য প্রকাশ্যে এসেছে কলকাতা হাইকোর্টে। আর তাতেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি এস রশিদির বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ। কারণ নতুন করে জমা দেওয়া হলফনামায় এসএসসি কলকাতা হাইকোর্টের উপরেই নিয়োগ বাতিলের দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছে। এমনটা যে করা যায় তা কেউ ভাবতেও পারেননি। আর তাতেই বিপাকে পড়ে এসএসসি। এসএসসি হলফনামায় জানায়, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশেই তারা চাকরি বাতিল করেছিল। এই দেখে অসন্তুষ্ট ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতিরা এসএসসিকে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে সময় বেঁধে দেন। এসএসসিকে সুনির্দিষ্ট অবস্থান জানাতে হবে ১৮ ডিসেম্বর তারিখের মধ্যে। আগের হলফনামা ফেরায় কলকাতা হাইকোর্ট।
এদিকে এই কাণ্ডে এখন এসএসসি’র অস্বস্তি বেড়েছে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের পক্ষ থেকে আদালতে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ভরা এজলাসে এসএসসি’র পক্ষ থেকে বলা হয়, সিবিআই তদন্ত শুরুর পর বেশ কিছু নথি দেয় তারা। সেসব স্কুল সার্ভিস কমিশনের সার্ভারের সঙ্গে মিলিয়ে দেখে অনিয়ম চিহ্নিত করা হয়। তার পর আদালতের নির্দেশে তাঁদের চাকরি বাতিল করা হয়। আদালত পাল্টা জানতে চায়, অনিয়ম খুঁজে পেয়ে নিজেরা কী করেছে এসএসসি? এসএসসি জানায়, অনিয়ম খুঁজে পেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সুতরাং ভরা এজলাসে বেইজ্জত হয়ে যায় এসএসসি।
আরও পড়ুন: নবান্নের সামনে বিক্ষোভের আবেদন ডিএ আন্দোলনকারীদের, খালি হাতে ফেরালেন বিচারপতি
অন্যদিকে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে চুপ করে যায় এসএসসি। মিন মিন করে জানায়, আদালতের নির্দেশ মতো পদক্ষেপ করা হয়েছে। তখন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির বক্তব্য, ‘এখন স্বাধীনভাবে অবস্থান গ্রহণ করুন। কোনও অনিয়ম হয়ে থাকলে আপনাদেরই তা ঠিক করতে হবে। স্কুল সার্ভিস কমিশন এটা বলতে পারে না যে আদালত তাদের মাথায় বন্দুক রেখেছে এবং তাই তারা চাকরি বাতিল করেছে। যদি এসএসসি জানতে পারে যে, মেধাতালিকা বা ওয়েটিং লিস্ট কোথাও নাম না থাকা ব্যক্তিরা চাকরি করছেন সেক্ষেত্রে কমিশনকে নিজেদের অবস্থান নিতেই হবে। তখন আদালতের নির্দেশের অপেক্ষা করলে চলবে না।’