বিরোধীদের ইন্ডিয়া ব্লক গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপধ্যায়। সেই কথা স্বীকার করে নিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী নিজেই। এমনকী আসন বণ্টন নিয়ে মতবিরোধের জেরে মমতা যখন 'একলা চলার' ঘোষণা করে দেন, তারপরও রাহুল সহ কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মমতার পক্ষেই কথা বলে গিয়েছেন। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলায় নিজের জমি ধরে রাখতে কংগ্রেসকে বারংবার আক্রমণ শানিয়েছেন। আর সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্রমণের তির রাহুল গান্ধীর উদ্দেশে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। রাহুলের ন্যায় যাত্রাকে কটাক্ষ করে 'ফটোশ্যুট' আখ্যা দিয়েছিলেন মমতা। পাশাপাশি মমতা চ্যালেঞ্জ করেছিলেন, দেশে ৪০টি আসনও জিততে পারবে না কংগ্রেস। আর তৃণমূল নেত্রীর সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবার পালটা তোপ দাগলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী। বহরমপুরের সাংসদ অভিযোগ করেন, বিজেপিকে ভয় পাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোাপাধ্যায়। (আরও পড়ুন: নবীনকে 'বন্ধু' আখ্যা মোদীর, দুই নেতার 'ব্রোম্যান্সে' বিজেপি-বিজেডি জোটের জল্পনা)
সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে এক সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় অধীর চৌধুরী বলেন, 'না বিজেপি, না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এদের দু'জনের মধ্যে কেউই কংগ্রেসের ভালো ফলাফল চায় না। যদি ইন্ডিয়া ব্লকের কোনও নেতা এটা বলে যে কংগ্রেস সারা দেশে ৪০টা আসনও জিততে পারবে না, তাহলে তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো নিজেই ইন্ডিয়া ব্লকে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি এখন বিজেপিকে ভয় পাচ্ছেন। তাই তিনি নিজের অবস্থান বদল করছেন।' এরপর অধীর অভিযোগ করেন, মমতা আদতে বিজেপির সুরেই কথা বলছেন। তাঁর কথায়, 'বিজেপি বলে যে কংগ্রেস শেষ হয়ে গিয়েছে, কংগ্রেসের আর কিছু নেই। বিজেপির সেই কথাই মমতার গলায় শোনা যাচ্ছে। মোদী এবং বিজেপি বলে যে কংগ্রেস নাকি তুষ্টিকরণের রাজনীতি করে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই অভিযোগই করছেন আমাদের বিরুদ্ধে। বিজেপি এবং দিদি কেন একই ভাষায় কথা বলছেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য রাজ্যের স্বার্থ দ্বিতীয় স্থানে আসতে পারে, তবে রাহুল গান্ধীর জন্য দেশ সবার আগে, তারপর অন্য সবকিছু।'
এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করে দেন, তাঁর দল বাংলার ৪২টি লোকসভা আসনেই এককভাবে লড়াই করবে। তাঁর এই 'একলা চলো' ডাকের সময়ই আবার রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায় দেখা গিয়েছিল বাম নেতাদের। এর আগে মমতাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, গান্ধীদের সঙ্গে পারিবারিক বন্ধুত্ব আছে তাঁর। তবে সম্প্রতি রাহুল গান্ধীকেই সরাসরি কটাক্ষ করে বসেন মমতা। মমতা দাবি ককেন, ২০১৯ সালে কংগ্রেসের দু'টি জেতা আসন তিনি ছাড়তে রাজি ছিলেন। তবে কংগ্রেস নাকি তার থেকে অনেক বেশি এবং 'অবাস্তব' দাবি জানিয়েছিল। তাই বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের জোট সম্ভব নয়। পাশাপাশি বাংলার কংগ্রেস নেতাদের সিপিএম-এর সঙ্গে মাখামাখিও মমতার না পসন্দ। ২০১১ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধেই বামেদের ৩৪ বছরের শাসনকালের সমাপ্তি ঘটিয়েছিলেন মমতা। পরবর্তীতে অবশ্য কংগ্রেস বামেদের সঙ্গে হাত মেলায় মমতাকে গদিচ্যুত করতে। তবে বিগত পাঁচবছরে বাম-কংগ্রেস জোটের শক্তি ক্রমেই ক্ষয় হয়েছে রাজ্যে। উত্থান ঘটেছে বিজেপির। আর এরই মাঝে অধীর ক্রমাগত আক্রমণ শানিয়ে চলেছেন মমতাকে। আর মমতাও কংগ্রেসের 'ক্ষমতা' নিয়ে মন্তব্য করে জোটের ভবিষ্যৎকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিলেন।