দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব। তবে সেই বন্ধুত্ব ত্যাগ করে বিগত দেড় দশক ধরে একলাই চলেছেন। তবে ফের কি পুরনো বন্ধু বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাতে চলেছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক? এমনই প্রশ্ন উঠেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এক মন্তব্যে। শনিবার ওড়িশার সম্বলপুরে অবস্থিত আইআইএম-এ এক অনুষ্ঠানে এক মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। এমনিতে বিজু জনতা দলকে বিজেপি ঘনিষ্ঠ দল হিসেবেই চিহ্নিত করা হয় দিল্লিতে। তবে ওড়িশার রাজ্য রাজনীতিতে এই দুই দলই একে অপরের প্রতিপক্ষ। গত নির্বাচনে একে অপরের বিরুদ্ধে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেছিল দুই দল। তবে সেই প্রতিপক্ষকেই নিজের 'বন্ধু' হিসেবে আখ্যা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
অবশ্য, বিজু জনতা দল যদি এনডিএ-র সঙ্গে যোগ দেয়, তাহলে হয়ত খুব বেশি অবাক হবে না কেউই। কারণ বিগত বেশ কয়েক মাস ধরেই দুই দলের 'রসায়ন' সেদিকেই ইঙ্গিত করেছে। এই আবহে শনিবার আইআইএম সম্বলপুর থেকে ওড়িশায় ৬৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের শিলান্যাস এবং উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। আর সেখানেই নবীনকে 'বন্ধু' হিসেবে সম্বোধন করেন মোদী। জবাবে নবীন পট্টনায়েকও মোদীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন। বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে দেশে নতুন দিশায় এগিয়ে চলেছে। আমরা অর্থনৈতিক পাওয়ারহাউজে পরিণত হচ্ছি।' এরপরে বিজেপির জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় বিজেডি বা নবীন পট্টনায়েককে আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকেন মোদী। তবে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা বিজেডি-র প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব নবীনের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক। তৃণমূল স্তরে দুই দলের কর্মীদের মধ্যে সম্পর্ক 'ভালো নয়'। তবে স্বয়ং মোদী এসে যেখানে নবীনের সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে নিলেন এবং দুই নেতার রসায়ন ধরা পড়ল সবার সামনে, তাতে দুই দলের জোট বাঁধা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে।
নবীনের বাবা বিজু পট্টনায়েক এককালে ছিলেন গান্ধীদের খুবই ঘনিষ্ঠ। জওহরলাল নেহরু থেকে ইন্দিরা গান্ধীর সময়কালে ছিলেন কংগ্রেসে। পরে ইন্দিরার সঙ্গে মতবিরোধের জেরে কংগ্রেস ছেড়েছিলেন। দীর্ঘদিন জনতা দলে ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পরে নবীন পট্টনায়েক গঠন করেছিলেন বিজু জনতা দল বা বিজেডি। ১৯৯৭ সালে দল ঘটনের পর থেকেই বিজেপির সঙ্গে ছিল তাঁর ঘনিষ্ঠতা। অটল বিহারী বাজপেয়ীর সরকারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও হয়েছিলেন নবীন পট্টনায়েক। পরে ২০০০ সালে বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধেই ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী হন। তবে ২০০৯ সালে বিজেপির সঙ্গ ছেড়েছিলেন নবীন। এরপর থেকে একলা চলেই ওড়িশার ক্ষমতার রাশ নিজের হাতে রেখেছিলেন। এমনকী বিরোধী রাজৈতিক পরিসরে তাঁর গুরুত্ব ক্রমেই বাড়ছিল। ইন্ডিয়া ব্লক গঠনের আগে যখন তৃতীয় ফ্রন্টের ভাবনা সামনে এসেছিল, তখন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গিয়ে দেখা করেছিলেন নবীনের সঙ্গে। তবে তারপরই নবীনের সুর পালটে যায়। মোদী স্তুতি শোনা যায় তাঁর গলায়। আর এবার মোদীর গলায় শোনা গেল নবীন স্তুতি।
এর আগে ২০১৯ সালে ওড়িশার লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচন একই সঙ্গে হয়েছিল। সেই সময় লোকসভা নির্বাচনে ওড়িশার ২১টি আসনের ৮টি জিতে নিয়ে নবীনের দলকে কড়া টক্কর দিয়েছিল বিজেপি। অপরদিকে বিজেডি জিতেছিল ১২টি আসনে। তবে একই সঙ্গে ভোট হওয়া সত্ত্বেও বিধানসভা নির্বাচনে বিজেডি একচেটিয়া ভাবে ক্ষমতায় ফিরে আসে ওড়িশায়। ১৪৭ আসনের ওড়িশা বিধানসভায় নবীনের দল জিতেছিল ১১৭টি আসনে। আর বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছিল মাত্র ২৩টি আসন। তাতেই ওড়িশার প্রধান বিরোধী দল এখন বিজেপি। কারণ সেই সময় কংগ্রেস লোকসভায় ওড়িশা থেকে একটিমাত্র আসন জিতেছিল আর বিধানসভায় তারা পেয়েছিল মাত্র ৯টি আসন। এই আবহে ওড়িশায় যদি বিজেডি এবং বিজেপি জোট গড়ে তোলে, তাহলে সেই রাজ্য কার্যত বিরোধী শূন্য হয়ে যাবে। এদিকে লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়লেও গত ৫ বছরে কেন্দ্রীয় সরকারের অনেক বিলের পক্ষেই বিজেডি সাংসদরা ভোট দিয়েছেন সংসদে। এই আবহে সরাসরি এনডিএ-তে না থাকলেও দিল্লির রাজনীতিতে এমনিতেই বিজেপির 'বন্ধু' হিসেবে পরিচিত বিজেডি। তবে সেই রাজ্যে গিয়ে নবীনের সঙ্গে মোদীর 'ব্রোম্যান্স' নজর কেড়েছে অনেকেরই।