এবার চিকিৎসকরা মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে উদ্বেগপ্রকাশ করল। কারণ পুজোর বাকি হাতে গুনে ১৪ দিন। আর তার আগেই রাজ্যে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। রাজ্যে একদিনে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি মানুষ। এই পরিস্থিতিতে কড়া সুরক্ষাবিধি মেনে চলার নির্দেশ দিতে বলেছেন চিকিৎসকরা। এমনকী চিঠিতে তাঁরা উল্লেখ করেছেন, পুজোয় যদি মানুষের ঢল নামে তাহলে করোনা সংক্রমণের সুনামিতে পরিণত হবে রাজ্য।
এদিকে করোনার জন্য বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে আসন শূন্যের দিকে নামতে শুরু করেছে বলে খবর। অথচ করোনা আক্রান্তের সংখ্যা রোজ বেড়ে চলেছে। দূর্গাপুজোর সময় তা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৫২৬ জন। যার জেরে রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৩০ জন। সরকারি বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় সব জেলাতেই বেড়েছে সংক্রমণ। তবে সংক্রমণের শীর্ষে রয়েছে কলকাতা। সেখানে গত একদিনে নতুন করে আরও ৭৬৫ জন মানুষ করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। তারপরই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। উত্তর ২৪ পরগনায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭১৭ জন।
অন্যদিকে কোভিড কমিটির বিশেষজ্ঞ তথা রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের পরামর্শদাতা বিআর শতপথি জানান, মানুষের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই এই বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কেরলে ওনাম উৎসবের পরই করোনা ছেয়ে গিয়েছে। একই পরিস্থিতি হয়েছে স্পেনে। সেখানেও নারী দিবস পালন এবং ফুটবল ম্যাচ হওয়ায় করোনা মহামারির আকার ধারণ করেছে।
এই চিঠিতে পরপর তিনদিনের দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যাও যুক্ত করা হয়েছে। রাজ্যে বিশ্বকর্মা পুজো ও মহালয়ার পর থেকেই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলে চিঠি লিখেছেন চিকিৎসকরা। তাই পুজো মণ্ডপে যাতে ভিড় না হয় তার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে। আর বাড়ির বাইরে বেরোলে মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হোক।
রাজ্যে ৫৮টি বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম আছে। যারা করোনা চিকিৎসা করে থাকে। তাদের মধ্যে ২১টি হাসপাতাল, নার্সিংহোমে বুধবার বেড শেষ হয়ে গিয়েছে। সেক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালে যেতে বলা হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, সরকারি হাসপাতালে এখনও ৬০ শতাংশ বেড খালি রয়েছে। কিন্তু কলকাতা ও সন্নিহিত জেলা থেকে বেসরকারি হাসপাতালে বেশি ভর্তি হচ্ছে করোনা সংক্রমণে। এখন পুজোর কেনাকাটা শুরু হয়ে গিয়েছে। ফলে সংক্রমণ এখান থেকে বাড়ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সংক্রমণের জেরে বেড়েছে রাজ্যে মৃতের সংখ্যাও। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৬৩ জন। ফলে মোট মৃত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৩৯ জন। এই মুহূর্তে সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা ২৮ হাজার ৮৫৪ জন। সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা গত ২৪ ঘণ্টায় বেড়েছে ৪৯৩ জন। এই বিষয়ে চিকিৎসক কোনার সংবাদসংস্থা পিটিআই–কে বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে দুর্গাপুজো করা উচিত ছিল না। কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। কারণ এখানে অনেককিছু জড়িয়ে আছে। ভাবুন পুলিশ, সিভিক পুলিশ, ভলেন্টিয়ার যাঁরা এই পরিস্থিতিতে রাস্তায় থাকবে।’